মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ও নাই, ও আছে...


আমি আছি, আমার ড্যাড নাই…!!!! চলে গেছে একেবারে সব ছেড়ে।।

রাসেল__চাদমারী মাঠের রাসেল__বন্ধন ৯৭ এর রাসেল__চুয়াডাঙ্গার গর্ব রাসেল___ইঞ্জিনিয়ার রাসেল__ বেটা রাসেল__মধু রাসেল___

রাসেল, আমাদের ব্যাচের সব থেকে মেধাবী, ভাল, সৎ, ভদ্র, সদাচারি, সদালাপি ও কর্মঠ ছেলেটির নাম। ৩ যুগেরও অল্প সময়ের জীবন পরিক্রমায় আমাদের সব বন্ধুদের প্রানভ্রমরাই পরিনত হয়েছিল। পরিচিত সবার কাছেই অত্যন্ত ভালবাসার ও আইডলে পরিনত হয়েছিল এই অল্প সময়ে। না বলে কোন শব্দ ছিলনা তার মুখে, দরাজদিলের হাতখোলা এক মানুষ ছিল সে। শিশুর মত মন ছিল ওর। যেমনঃ ও যখন কলেজে পড়ত, তখন আমরা যদি কখনও হাসির গল্প করতাম তখন ও হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ত, এমনকি কোন বন্ধু যদি দূর থেকেও যদি হাত ইশারায় কাতুকুতু দেবার ভান করত, তাতেও সে হেসে গড়িয়ে পড়ত। এতটাই সহজ মনের মানুষ ছিল ও। কলেজের সহপাঠিনীদের কেউ ওর সাথে কথা বলতে আসলে সে লজ্জায় লাল হয়ে যেত। কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ওর ছোট বোনের বান্ধবীর ভালাগার প্রস্তাবে রাজী হওয়া থেকেই ভালবাসা এবং ১২ বছর পর পড়াশোনা শেষে চাকরীতে যোগদানের পর তাকেই বিয়ে করা। কোনদিন আর কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাইনি। এমন কোন বন্ধু নাই যে তার কাছ থেকে কোন না কোন সময়ে উপকার পায়নি। এমনকি অন্যের স্কুল, কলেজ, বিস্ববিদ্যালয়ের কঠিন পরিক্ষাও নিজে সাহায্য করে শুধু পাশ নয় ভাল রেজাল্ট করিয়ে দিত। বন্ধুদের আড্ডার চা-পানি খরচটাও বেশিরভাগ সময় ওই বহন করতো। কোনদিন কোন বিনিময় নেয়নি কারও কাছে। সবার ও এত আদরের ছিল যে, সবাই ওকে “বিটা রাসেল” মানে বেটা রাসেল বা " মধু রাসেল " বলে ডাকতো। আমার কাছে ও ছিল বন্ধু, বেটা, শিক্ষক, খেলার সাথি সব সব।

আমার আদরের “ড্যাড” রাসেল আজ দুনিয়াতেই নাই। ও খুব বলতো, ড্যাড সামনে খুব খারাপ সময় আসছে, ইমান টিকিয়ে রাখাই খুব দায়, খুব সাবধান, আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিওনা। আরও বলতো দেখবে, সবাইকেই এক দিন বালিশ ছাড়াই শুয়ে পড়তে হবে।

আহ!!! ওর প্রভাব ও আন্তরিকতা ছিল এত গভির যে,,

- কোন প্রোগ্রাম করতে হবে? রাসেল কই, রাসেলকে ডাক।
- পিকনিক করতে হবে? রাসেলকে বল।
- ঘুরতে যেতে হবে? রাসেলকে বল সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।
- কোন অন্যায় হচ্ছে? রাসেল কই, ও জানলে খবর আছে।
- পড়া বুঝতে বা পরিক্ষা পাশে অসুবিধা হচ্ছে? রাসেল আছে না।
- বন্ধন ফাউন্ডেশনের ট্যুর করতে হবে? রাসেল সব ঠিক করে দেবে।
- হল্লা করে কোথাও বেড়াতে যেতে হবে? রাসেল কে জানাও।
- খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে? ওই যে রাসেল আছে।
- দলবদ্ধভাবে কারও অনুষ্ঠানে যাওয়া লাগবে? রাসেল তুই দেখ তো।

কত বললে রাসেল এর কথা বলা শেষ হবে জানিনা। ড্যাড, তোকে খুব খুব ভালবাসতাম। তোকে কখনও বাপের মায়ায়, কখনও বা ছেলের মায়ায় আবার কখনও বা প্রানপ্রিয় বন্ধুর ভালবাসায় ভালবাসতাম। আমাকে দুনিয়ার আর কেউ কখনও ড্যাড বলে ডাকবে না রে পাগল। তোর মত মানুষ কে বন্ধু হিসাবে পাওয়া কত বড় ভাগ্যের কথা তা শুধু আমারাই জানি। কত রাত চাঁদমারি মাঠে গল্প করতে করতে কেটেছে রে পাগল, কত স্মতি তোর সাথে। ছোটকালে আম্মা তোকে দেখিয়ে বলতো ওর মত করে পড়বি। তুই ছিলি পুতুলের মত দেখতে, কিছুটা বিদেশিদের মত। তুই যখন হাসতিস মনে হত দুনিয়াতে দুঃখ বলে কিছুই নাই। তুই ছিলি ৫ ওয়াক্ত নামাজি, আমাদেরও বলতি নামাজ পড়ার জন্য সবসময়। ঘন্টার পর ঘন্টা কলেজ লাইফে চাদমারী মাঠে আড্ডামারা, রাতে খাইরুলের ঘরে বসে রাতভর তোর সাথে গল্প, সারাদিন একিসাথে ৪ জন টিচারের কাছে পড়তে যাওয়া, আবার বিকালে একসাথে খেলা করা। আমাদের ১০-১১ জন বন্ধুর এটাই ডেইলি রুটিন ছিল কলেজ লাইফে। তুই ছিলি ট্রেডমার্ক ভাল ছেলে। যখন তুই কেবলই নতুন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিস, তখনও আমার ভার্সিটির পড়া শেষ হয়নি। তুই খুলনা থেকে ঢাকায় এসে চাকরি শুরু করলি। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এসে মাঝে মাঝে থাকতি। আমরা কখনও শহিদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে, অথবা আমার একুশে হলের খোলা ছাদে, অথবা বিপুলের জিয়া হলের রুমে অথবা ছাদে কত কত রাত পার করেছি আড্ডা দিয়ে। তোর সাথে থাকলে সময় কোন দিক দিয়ে চলে যেত টেরই পেতামনা। ২০০৩ সালে আমার কোন মোবাইল ছিলনা। তোর ছিল দামি একটা ফ্লোল্ডিং সেট। তুই রাতে হলের বিছানায় ঘুমিয়ে গেলে আমি তোর মোবাইলটা নিয়ে চুপি চুপি সারারাত গেম খেলতাম। তুই কখনও কিছু বলিসনি এই জন্য।
পাগল, তুই কি অভিমান করে চলে গেলি আমাদের উপর? আমরা তোর মত ভাল বন্ধু আর কখনই পাবনা। তুই শুধু দিয়েই গেলি, কিছুই নিয়ে গেলি না। সবার প্রথমে তুইই বালিশ ছাড়া একাই শুয়ে পড়লি?? কেন রে ড্যাড, কেন? আমরা আর কাকে নিয়ে সুন্দরবন ট্যুরে যাব? কে আমাদের সব দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়ে আমাদের বন্ধন৯৭ কে বেধে রাখবে? যে কোন অসুবিধায় পড়লে হাসতে হাসতে কে বলবে “ কোন ব্যাপার না, সব ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহ উপর ভরসা রাখো “।
আহ, জীবন ! আহ, ড্যাড !
ইয়া আল্লাহ, তোমার হাতে আমার এই বন্ধুটির ভার ছেড়ে দিলাম। তুমি ওকে দেখে রেখো জান্নাতুল ফেরদাউসে। ইয়া রাহমান, ওর কাজ ও স্বপ্নের মতই ওকে তোমার ছায়ায় স্থান দিও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি!

ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি! যারা এমন চিন্তায় আছেন তারা ঠিক লাইনেই আছেন। কারন আপনি কেন জব চেঞ্জ করতে চান তা আপনার থেকে ভাল কে...