মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

এক সংগ্রামী চাকুরীজীবী "মা" এর গল্পঃ





এক সংগ্রামী চাকুরীজীবী "মা" এর গল্পঃ

এই "মা" আজ তার ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেলেন......... 

ছোট্ট একটি মেয়ে। অসম্ভব মেধাবী। ৯ ভাইবোনের সংসারে ২য় বড় সন্তান। বাবা ছিলেন চিনি কলের কমকর্তা। অভাবের সংসার। বাকি ছোট ৭ ভাইবোনকে কোলেপিঠে করে মানুষ করা। ভারী সংসার তাই ১৬ বছর বয়সে মেট্রিক পাশের পরই বিয়ে হয়ে যায় অত্যন্ত সৎ নিম্নবিত্ত এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ছেলের সাথে। জমিজমা বলেও কিছুই ছিলনা। স্বামীও ছিল অনেক ভাইবোনের বড়। স্বামীর সংসারে ছিল ননদ ও দেবরদের একগাদা ছেলেমেয়ে। স্বামি অত্যান্ত ভাল ও দরদি মানুষ ছিলেন, তাই ভাই-বোনের অনেকগুলো ছেলে মেয়েকে নিজের কাছে রেখে পড়া লেখা শিখিয়েছিলেন।

কিশোরী মেয়েটি নতুন সংসারে এসেই শুরু করল অমানুষিক পরিশ্রম। সাথে নিত্য কঠিন অভাব। বিয়ের কিছুদিন পর কোল জুড়ে আসলো ১ম সন্তান। সন্তান কোলে করেই ভর্তি হলেন কলেজে। লেখা পড়া করে কিছু একটা করে যেন কিছুটা হলেও সংসারে অভাব কমে। এর কয়েক বছর পর হল ২য় সন্তান। মা ততদিনে কলেজ থেকে এইচ,এস,সি ও ডিগ্রী পাশ করে সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করা শুরু করেছেন। ২ সন্তান কোলে করেই উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন, আবার চাকরীও করেছেন একইসাথে। তার ২ সন্তানের সাথে ছিল আরও শ্বশুরকুলের আত্বীয়ের ৪ সন্তান। এই অমানুষিক পরিশ্রম আর অর্থনৈতিক কষ্টের যাতাকলে হয়ে গেলেন মৃত্যু পথযাত্রি। তখন ১৯৯১ সন। সেই শুরু কঠিন রোগের। আজ অব্দি ভুগছেন। স্বামিও কঠিন অসুস্থ গত ৩৯ বছর ধরে। কিন্তু নিজের সমস্ত কাজ, চাকুরি, সন্তান পালন, স্বামির সেবা, সামাজিকতা, শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য কর্তব্য সব কিছুই একা হাতে সামলেছেন।
 

বাসার পাশেই ছিল সরকারি সদর হাসপাতাল আর অনেক ক্লিনিক। আত্বীয় স্বজন যারা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে আসত, তাদের সাথের লোকজন সব উনার বাসায় উঠতো। সারাদিন চাকরি শেষে সন্ধাবেলা এসে প্রায় প্রতিদিনই উনাকে অনেক জনের জন্য অতিথিসেবা করতে হত। অভাবের জন্য বাসায় কখনও কাজের লোক রাখতে পারেননি। কখনও রাত ১ টার আগে ঘুমাতে যেতে পারেননি, আবার ফজরের আযান দেবার সাথে সাথে উঠে বাসা পরিস্কার, উঠোন ঝাড়ু দেয়া, রান্না করা, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিজে চাকুরিতে যাবার জন্য তৈরী হতে যেয়ে প্রায় দিনই না খেয়ে স্কুলে চলে যেতেন। আবার বিকালে এসে মধ্যরাত পর্যন্ত চলত গাধার খাটুনি সেই অসুস্থ শরির নিয়েই। এক মুহুর্তের জন্যও মুখটাকে কখন কালো করেননি। এত কিছুর ভিতরেও মুখে হাসি লেগেই থাকে। নিজের তিল তিল করে সঞ্চিত অমানুষিক কষ্টের টাকা দিয়ে স্বামির কেনা জমির উপর একটি সুন্দর বাড়িও বানিয়েছেন।

হ্যা, এতক্ষন যে মায়ের কথা বলছিলাম উনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন। মায়ের কঠিন অসুস্থতা আর কষ্টের মাঝেও কখনও যদি একটুও অসুস্থ হয়েছি বা বিপদে পড়েছি, আমাদের ২ ভাইকে পাগলের মত সেবা ও সাহায্য করেছেন। নিজে কখনো ভাল পোশাক পরেননি, নিজের কোন সাধ ছিলনা তার। আমাদের ২ ভাইকে করেছেন উচ্চশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। মা, আমাদেরকে কখনো ভাল পোশাক বা খেলনা কিনে দিতে পারেননি। কিন্তু আমাদের তাতে কখনো কষ্ট হয়নি। কারন আমার মায়ের সেই সাধ্য যে ছিলনা। উনি আমাদেরকে শুধু শিক্ষা কিনে দিয়েছেন। আমরা তাতেই কৃতজ্ঞ।

মা গো, তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি কস্ট ছাড়া। মা গো, তুমি আমার এই অক্ষমতা কে ক্ষমা কোরো। মা গো, আমি তোমার অধম সন্তান। মা গো, তোমার আচলের ছায়া থেকে যেন আল্লাহ কখনো বঞ্চিত না করেন। মা গো, তুমি ভাল থেকো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা

  জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হব...