রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮

আশা নামের আলোটি কে কখনোই নিভতে দেওয়া উচিৎ নয়



একটি রুমের ভেতরে চারটি মোমবাতি জ্বলছিলো। মোমবাতি গুলো একে অপরের সাথে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলা শুরু করলো। প্রথম মোমবাতি টি বললো, ‘আমি শান্তি। কেউ আমাকে জ্বালিয়ে রাখতে পারবেনা। আমি এখন নিভে যাবো।’ তারপর সেটি নিভে গেলো।


. দ্বিতীয় মোমবাতি টি বললো, ‘আমি বিশ্বাস। শান্তি যেহেতু নেই, তাই আমার আর জ্বলতে থাকার কোনো প্রয়োজন দেখছিনা। আমি এখন এখন নিভে যাবো’। কথা শেষ করার পর দ্বিতীয় মোমবাতি টি নিভে গেলো। .

তৃতীয় মোমবাতি এবার মুখ খুললো, আমি ভালবাসা। শান্তি এবং বিশ্বাস কেউ নেই, তাই আমারো বেশিক্ষণ জ্বলার মত শক্তি নেই। মানুষেরা আমাকে গুরুত্ব না দিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখে। শুধু তাই না, ওরা প্রিয় মানুষ গুলোকে পর্যন্ত ভুলে যায়।" কথা শেষ করে তৃতীয় মোমবাতি টিও নিভে গেলো।

. কিছুক্ষণ পর রুমের মধ্যে একটি বাচ্চা প্রবেশ করলো, তিনটা নিভে যাওয়া মোমবাতির পাশে টিমটিমে জ্বলতে থাকা চতুর্থ মোমবাতি দেখে বাচ্চা টি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, তোমরা জ্বলছো না কেন? .

তোমাদের পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জ্বলা উচিৎ ছিলো। তারপর

বাচ্চা টি কাঁদতে শুরু করলো। এবার চার নম্বর মোমবাতি টি মুখ খোলে। ‘ভয় পেয়ো না। আমি যতক্ষণ জ্বলছি, তুমি চাইলেই আমাকে দিয়ে আবারো বাকি মোমবাতি গুলোকে জ্বালাতে পারো। আমার নাম আশা। "বাচ্চা টি আশা নামের মোমবাতি টি দিয়ে একে একে বাকি মোমবাতি গুলোকে আবারো জ্বালালো। সমস্ত রুমটা আবারো উজ্জ্বল আলোতে আলোকিত হয়ে উঠলো।

গল্পটি রূপক কিন্তু হাজারো হতাশা, দুঃখ আর সমস্যার অন্ধকারে ডুবে গিয়ে আশা নামের আলোটি কে কখনোই নিভতে দেওয়া উচিৎ নয়। কারন আশা না থাকলে আমাদের জীবন থেকে শান্তি, বিশ্বাস এবং ভালবাসাও অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

নিজেকে পেয়ালার মত সংকীর্ণ না করে, নদির মত প্রশস্ত করুন।



একদিন এক যুবক খুব মন খারাপ করে উপসনালয়ে বসে ছিল। তার এই কষ্টক্লিষ্ট চেহারা দেখে এক বয়স্ক জ্ঞানী বৃদ্ধ তার পাশে এসে বসে বলল আমি কি তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে পারি। যুবকটি রাজি হল। তখন লোকটি বলল, আসো আমরা একটি কাজ করি বলে তিনি একটি গ্লাস পানি ও এক প্যাকেট লবন দিলেন যুবকের হাতে। তাকে বললেন, এক মুঠ লবন নিয়ে গ্লাসে ঢাল ও গুলায়ে ফেল। যুবকটি তা করলে তিনি তাকে বললেন, এবার ওখান থেকে পানি খাও। যুবকটি পানি পান করল। তিনি তাকে জিজ্জেস করলেন, স্বাদ কেমন। সে বলল, অত্যধিক নোনতা, খেতে খুব কস্ট।


এবার তিনি যুবককে বাইরে একটি নদির পাড়ে নিয়্র গেলেন। বললেন, আবার এক মুঠ লবন নাও এবং তা নদির পানিতে মেশাও। যুবকটি তা করলে তিনি তাকে নদি থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেতে বললেন। যুবকটি নদি থেকে পানি নিয়ে পান করার পর বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, খেতে কেমন। সে বলল, আগের মত মোটেও নোনতা নয়, ভালই খেতে।

তখন লোকটি বলল, জীবনের পাওয়া সব দুঃখ কস্টগুলো ওই লবনের মতই। কস্টের পরিমানও সবসময় একই রকম থাকে। কিন্তু কস্টের অনুভূতিটা বা স্থায়িত্ব নির্ভর করে কতটুকু পরিসরে আমরা তাকে গ্রহন করছি।

নিজেকে পেয়ালার মত সংকীর্ণ না করে, নদির মত প্রশস্ত করুন। 
কস্টের পরিমানটাও অনেক কমে যাবে, বন্ধু।

সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮

একটি অতশীপর বৃদ্ধা ও গাবতলী কাহিনী

 
অসুস্থ বাবা-মাকে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর জন্য আনবো বলে অফিস শেষ করে গাবতলী টার্মিনালে আসা দেশের বাড়িতে যাবার জন্য। কিন্তু বিধিবাম। গাড়ি মিস। বসে বসে পরবর্তী বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। ইতিমধ্যে এই অতশীপর  বৃদ্ধার আগমন। পাশে বসলেন। আছেন কেমন জিজ্ঞেস  করতেই ফোকলা দাতের ভূবন মোহিনী হাসি দিয়ে শুরু করলেন তার শত বছরের জীবনের গল্প। ফরিদপুরে জন্ম। উনি এখন নাতি-পুতিনের বিয়ে দিয়ে এখন ঢাকার গাবতলি টার্মিনালে সেটেল হয়েছেন। সারাদিন ঘোরেন-ফিরেন টার্মিনাল জুড়ে। রাতে ফুটপাতেই ঘুমান। টার্মিনালের সবাই উনার নাতি হন। কোন পিছু টান নাই। খুব একটা দুখবোধও নাই। চোখে দেখেন না বললেই চলে। দাত বলে কিছু নাই। সারা মুখে বয়সের বলিরেখা।
 
প্রায় মিনিট ৩০ গল্প হল। আমার মনটা অসম্ভ রকম খারাপ ছিল। মনটা বেশ হাল্কা হল উনার সাথে গল্প করাতে। এই শতবর্ষী  বৃদ্ধার সাথে গল্প করতে করতে রাতের গাড়ি চলে এল। উঠার সময় উনার সাথে ছবি তোলার কথা বলতেই উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, "তোরা বাপু কেমন পোলা, লজ্জা শরম নাই, ছবি তোলার কথা বলিস। আর দেখিস না আমি চোখে দেখিনা।" বৃদ্ধা দাদীর ধমক খেয়ে মনটা স্নেহে ভরে গেল। পরে দাদীকে কোন রকমে রাজী করিয়ে এই ছবি তোলা।
 
এই বয়সেও কারও প্রতি কোন অভিযোগ নাই তার। আর আমরা শুধুই অভিযোগ এর ডালি নিয়ে বসে থাকি সবসময়। নিজেকে খুব অশিক্ষিত মনে হল এই শতবর্ষী বৃদ্ধার কাছে। কথার মাঝেই হঠাৎ করে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলেন আপন মনে। এইভাবে ঠুস  করে কিছু না বলে চলে যাওয়াতে আমার একটু মন খারাপ হল। পরক্ষনেই মনে হল উনি তো আমার সাথে আপন নাতির মতই কথা বলেছেন, আপন মানুষের সাথে তো এত ফর্মালিটি দেখানোর কিছু নাই।
 
আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের আপন মানুষগুলোর সাথে ফর্মালিটিস দেখাতে যেয়ে আপনত্বকেও কৃত্রিম করে ফেলছি। জমিয়ে ফেলছি অনেক অনেক অভিযোগ। বাড়ছে কষ্টবোধ। জীবন হচ্ছে জটিল।
 
দাদী, আপনি ভাল থাকুন। দোয়া করবেন যেন অভিযোগ নয়, ভালবাসতে শিখি অকৃত্রিমভাবে।।

একজন সেবক ও যুবকের কাহিনী

শীতের পড়ন্ত এক দুপুরে বসে ছিলাম আমার এক পরিচিত একজনের ওষুধের দোকানে (ভিতরে বসা) কিছুটা অলস সময় তার সাথে গল্প করে পার করার উদ্দ্যেশে। কিন্তু সাক্ষি হলাম এক মহৎ মানব সেবার। দোকানের মালিক বয়সে যুবক। দেখতে সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান। ডাকনাম খোকন। অত্যন্ত হাসিখুশি একটা মানুষ। চুয়াডাঙ্গা শহরের কেন্দ্রস্থলে ব্যাস্ততম ওষুধের দোকান তার। 
আমি দেশের বাড়ি গেলে সময় পেলে প্রায়ই বসি তার দোকানে। ছিলাম তার দোকানে প্রায় ৩ ঘন্টা। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের একাধিক নারী-পুরুষ তার দোকানে আসলো ওষুধ কেনার জন্য। লক্ষ্য করলাম বেশিরভাগ লোকই তার দোকানে এসে নিজেদের সমস্যার কথা বলে জিজ্ঞাস করে কি ওসুধ খেতে হবে? কেউ আসে ওষুধ নেবার জন্য, কেউ আসে ইঞ্জেকশন দেবার জন্য, কেউ আসে প্রেশার মাপানোর জন্য, কেউ আসে এক্সিডেন্ট করে ড্রেসিং করার জন্য, কেউ বা আসে তার ঠিকমত টাকা নাই তাই কম টাকা দিয়ে ওষুধ নেবার জন্য, কেউ বা আসে শুধুই গল্প করার জন্য। সে হাসিমুখে সবার কথা শুনে। একইসাথে নিজেই নার্স, কম্পাউন্ডার, ডাক্তার, ফার্ষ্টএইডার, সেলসম্যান, মালিক, গল্পকারির, কর্মচারির, আবার দোকানের ঝাড়ুদারের ভূমিকা পালন করে। সাজেশন দেয় রুগির সাধ্যের ভিতর সব থেকে ভাল ও খরচ কম হবে এমন ওষুধের। সেবার জন্য সে কোন পয়সা নেয়না।
এইভাবেই সেবা করে যাচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। বাবা ছিলেন এলাকার নামকরা প্যারামেডিক ডাক্তার। বাবার কাছ থেকেই দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা শেখা। বেশ কয়েক বছর ইতালিতে কাটিয়ে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে বাবার এই ওষুধবিক্রি ব্যাবসায় নাম লেখানো। সাথে করে যাচ্ছে বিনাপয়সায় মানবসেবা। সারাটাসময় মুখের হাসিটা একটুও মলিন হয়না তার। খুবই বন্ধুবাৎসল। বন্ধু বা পরিচিত কেউ দোকানে আসলে শত ব্যাস্ততার মধ্যেও আপ্যায়ন করতে ভুল হয়না। শত ব্যাস্ততার মাঝেও পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিতে ভুল হয়না। ভাবখানা এমন যেন সবাই তার আত্বীয়, তার বাসায় বেড়াতে এসেছে। কোন গরিব মানুষ দোকানে ওষুধ কিনতে আসলে যদি টাকায় কম পড়ে সে হাসি মুখে তা নিয়ে নেয়।
ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্যই বিনাপয়সায় ছোটখাট ওসুখের জন্য চিকিৎসাসেবা দেয়। আবার গরিব মানুষ সাহায্যের জন্য আসলে যতটুকু পারে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে দোকান খুলেই শুরু হয় তার ওষুধ বিক্রি ও সাথে এই বিনা পয়সার মানবসেবা, চলে মাঝরাত পর্যন্ত। এমনকি পরিচিত মানুষ অথবা বন্ধুবান্ধব এর কোন আত্বীয়স্বজন রাতবিরাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জানালে বাসায় যেয়ে সেবা দিয়ে আসে। সৌভাগ্যক্রমে তার বন্ধুত্ব আমি পেয়েছি। নিরবে নির্ভিতে অসংখ্য মানুষকে এইভাবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। কেউ হয়তো খেয়ালও করেনা তার এই মানবসেবা। সেও প্রতিদানের আশা করেনা কখনও।
এইভাবে হয়তো দেশের আনাচে কানাচে কতশত খোকন মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে কোনকিছুর প্রত্যাশা না করেই। এদের জন্যই হয়তো আজও আমরা শত অভাব আর অন্যায়ের মাঝেও সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখি, মানবতার মানে খুজি।
আসুন আমরা সবাই মিলে মানবতাকে আকড়ে ধরি, যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত অন্যের জন্য করার চেষ্টা করি। সিনেমার সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায় হিরো না খুঁজে নিজেরাই মানবতার সেবা করে বাস্তবের হিরো হই। তাতে মানুষ হিসাবে আমরাই মূল্যবান হব, হব সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজ হবে সুন্দর, দূর হবে অন্ধকার।

রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

নিজের শিকড়কে অবজ্ঞা করবেন না, বন্ধু।

নিজের শিকড়কে অবজ্ঞা করবেন না, বন্ধু।  

   এক গ্রামে একটি বড় আম গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় প্রতিদিন একটি বালক খেলা করত, গাছের ডালে চড়তো, আম পেড়ে খেত ও প্রায়ই গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ত। সে গাছের সাথে খেলতে খুব পছন্দ করত, আর গাছটিও তাকে খুব ভালবাসত। বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে গেল এইভাবে। এক সময় সে আর গাছ তলায় খেলতে আসা বন্ধ করে দিল। 
কয়েক বছর পর একদিন বালকটি গাছের কাছে ফিরে আসল বিষন্ন মুখে। গাছটি তার দিকে তাকিয়ে বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। সে তখন বলল, আমি আর এখন বালক নেই, আমি বড় হয়ে গেছি। আমার এখন খেলনা চাই, সেগুলো কেনার জন্য টাকা দরকার। গাছটি বলল, বাবু আমার কাছে তো কোন টাকা নাই, তবে তুমি আমার আমগুলো পেড়ে নিয়ে যাও এবং তা বিক্রি করে তোমার খেলনা কেনো। বালক অতি আনন্দের সহিত গাছের সবগুলো আম পেড়ে নিয়ে চলে গেল, কিন্তু আর ফিরে এলনা। গাছটি অপেক্ষায় ছিল সে হয়তো ফিরে আসবে, কিন্তু আসল না। তার ফিরে না আসাতে গাছটি খুব দুঃখ পেল।

বহুদিন পর বালকটি যখন আবার আম গাছের কাছে ফিরে আসলো তখন সে যুবক। গাছটি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। সে তখন বলল, আমার এখন সময় নাই, আমার পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি করা লাগবে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পার? গাছটি বলল, আমার তো বাড়ি নাই, কিন্তু তুমি আমার ডালপালা গুলো কেটে বাড়ি বানাতে পার। সে তখন গাছের সব ডালপালা কেটে নিয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেল। গাছটি বালকটির আনন্দ দেখে খুশি হল, কিন্তু তারপর সে আর ফিরে এলনা। গাছটি আবার একা হয়ে গেল ও খুব দুঃখ পেল।

 বহু বছর পর এক গ্রীষ্মদিনে লোকটি আবার গাছের কাছে ফিরে আসলো। গাছটি তাকে দেখার সাথে সাথেই খুশি হয়ে গেল ও বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। লোকটি বলল, আমি এখন বয়স্ক হয়ে গেছি। আমার এখন একটা নোকার দরকার অবসর সময়ে মাছ ধরে আনন্দমুখর সময় কাটানোর জন্য। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পার। গাছটি বলল, আমার তো কোন নোকা নাই, তবে তুমি আমার গুড়িটি কেটে তা দিয়ে নোকা বানাতে পার। লোকটি গাছের গুড়িটি কেটে নিয়ে নোকা বানিয়ে মনের আনন্দে নোকা বাইতে চলে গেল, আর ফিরে এলনা বহুদিন। 

একদিন আবার লোকটি গাছের গোড়ায় ফিরে আসল, তখন সে থুরথুরে বৃদ্ধ। গাছটি তাকে দেখে বলল, বাবা এখন তো আমার তোমাকে দেবার জন্য আম নাই। লোকটি বলল, আমার এখন আম খাবার মত দাতও অবশিষ্ট নাই। গাছটি বলল, আমার তো কোন গুড়িও নাই যাতে তুমি চড়তে পার। লোকটি বলল, আমারও আর চড়ার শক্তি নাই। গাছটি বলল, আমার কাছে শুধু আমার শিকড় ছাড়া তোমাকে দেবার আর কিছুই নাই। ওগুলোই নিয়ে যাও। বৃদ্ধ লোকটি বলল, না, আমার আর ওসবেরও কোন দরকার নাই। আমি এখন আর আর নড়াচড়া করতে পারিনা ঠিকমত। আমি তোমার শিকড়ের উপরই বিশ্রাম নিতে চাই শেষ বয়সে। গাছটি বলল, আসো আমার উপর বস ও বিশ্রাম নাও। বৃদ্ধটি গাছের শিকড়ের উপর বসল এবং গাছটি অনেক খুশি হল ও হাসল। 

গাছটি আসলে আমাদের বাবা-মায়ের প্রতিক। আমরা যখন ছোট থাকি তাদের সাথে খেলতে ভালবাসি, বড় হলেই তাদেরকে একা করে চলে যায় নিজের প্রয়োজনে, যখন কিছুর দরকার পড়ে আমরা আবার ফিরে আসি তাদের কাছে। আমাদের সব আবদার তারা হাসিমুখে পূরন করে। কিন্তু আমরা ফিরেও চাইনা তাদের দিকে। ভুলে যায় তাদের অবদানের কথা। নিজেদের নিয়েই মত্ত থাকি। বাবা-মা তাদের সবকিছুই উৎসর্গ করেন সন্তানের জন্য, বিনিময়ে হয়ত একটু সঙ্গ চান। তারা চান আমরা যেন একটু হাসিমুখে কথা বলি, তাদের পাশে থাকি। যেন অবজ্ঞা না করি। 
 
আসুন না, খুব বেশি দেরি হবার আগেই বাবা-মাকে অন্তত এতটুকু সময় দেয়, সন্মান করি, ভালবাসি। না হলে যেদিন এই গাছরুপি বাবা-মা হারিয়ে যাবে সেদিন কেঁদেও কোন লাভ হবেনা। আর আপনিও একদিন বাবা অথবা মা হবেন, তাইনা? 

রুঢ় বাস্তবতা বা অলিক অসত্য



নূপুরের দাম হাজার টাকা হলেও তার স্থান পায়ে, অথচ টিপের দাম একটাকা হলেও তার স্থান কপালে। ইতিহাস স্বাক্ষী আজ পর্যন্ত কোনো দিন লবনে পোকা ধরেনি, কিন্তু মিষ্টিতে প্রতিদিনই ধরে আবার পিপড়া ও ছাড়ে না। মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃতব্যক্তিকে স্মরণ করা হয়, আবার মোমবাতি নিভিয়ে জন্মদিন পালন করা হয়। মানুষ সোজা পথে চলতে চায় না, বাকা পথে সবারই আগ্রহ বেশি। তাই তো মদ বিক্রেতাকে কোথাও যেতে হয় না, আর দুধ বিক্রেতাকে বাজারের ধারে ধারে ঘুরতে হয়। আমরা দুধ বিক্রেতাকে সর্বদা বলে থাকি দুধে পানি মিশান নি তো? অথচ মানুষেরা মদে পানি মিশিয়ে খায়। মানুষকে জানোয়ার বললে খেপে যায়, আর বাঘের বাচ্চা বললে খুশি হয়।। অথচ দুটোই পশুর বাচ্চা। আমরা মানুষ বড়ই আজব।। ভাল মন্দের পার্থক্য কবে বুঝবো?? (উৎসকৃত)

বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

একজন সৎ পাগল অথবা অতিবন্ধুর গল্প



একজন সৎ পাগল অথবা অতিবন্ধুর গল্প 
..............................................................
পাগল ই তো...সে পাগল নয় তো কি !! পাগলটা হুট করেই না বলে চলে গেল না ফেরার দেশে। বরাবরের মতই।
অত্যন্ত সুদর্শন সদাহাস্যময় এক মায়াবী চেহারার যুবক। সদা কর্মচঞ্চল। অসম্ভব মেধার অধিকারী। কোনদিন কেউ তার মুখ কালো দেখিনি। যে যখন যে কাজে ডাকতো, কোন বিপদে পড়ে ডাকলেই তখনিই তার কাছে ছুটে যেত। প্রাইমারী স্কুল থেকে একসাথে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিজীবনেও একসাথে আমরা। আজ থেকে শুধু পার্থিব ভাবে আলাদা হয়ে গেলাম।
স্কুলে যখন পড়তো লাল টুকটুকে এক খান বাবু ছিল দেখতে। কলেজে আমরা তাকে ডাকতাম টাইটানিক রাসেল (ডি কাপ্রিও এর মত চুল ছিল) বলে। মেয়েদের মত লাজুক ছিল, কিন্তু বাঘের মত সাহস ছিল। ভয় বলে কিছু দেখিনি ওর ভিতর। কোন মেয়ে দেখলেই ওর চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যেত। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো ছোটবেলা থেকেই। প্রাইমারী স্কুলে, হাইস্কুল, কলেজে ক্লাস ক্যাপ্টেন ও ফার্স্টবয়, মেট্রিকে সেন্টার ফার্স্ট, কলেজে সেই একই রেজাল্ট, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া, কিন্তু ভর্তি হয়েছিল খুলনা বি,আই,টি তে। ওখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি,পি। রেজাল্টও খুব ভাল। অবশেষে টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি। এর কয়েক বছর যেতে না যেতেই চাকরি ছেড়ে ব্যাবসায় নামা, কারন কেউ তার সাথে চাকরের মত ব্যাবহার করুক এটা সহ্য হয়নি।
আমাদের একটা ফাউন্ডেশন আছে, নাম বন্ধন ৯৭ ফাউন্ডেশন। আমরা যারা চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৯৭ সালে এস,এস,সি পরিক্ষা দিয়েছিলাম এটা তাদের সংগঠন। ওই সংগঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিল সে। আমরা কলেজ পাশ করার আগেই বাংলাদেশের অর্ধেক ঘুরে শেষ করে ফেলেছিলাম ১০-১১ জন মিলে। সে ছিল সেই সব আয়োজনের মধ্যমনি। সব কাজ নিজে থেকে করতো। জন্মগত ভাবে সহজাত লিডারশীপ ছিল ওর ভিতর। ওর প্লানে একটানা ৭ দিন পরপর রাত জেগে পিকনিকও করেছি। কেয়ারটেকার সরকারের সময় যখন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া নিষেধ ছিল সেই সময়ও তার নেতৃতে সারারাত জেগে পিকনিক করেছি আমাদের চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত চাঁদমারি মাঠে।
কখনও অন্যায় করতে দেখিনি, কিন্তু অন্যায় দেখলে সাথে সাথে রুখে দাড়াতে দেখেছি। কোথাও বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিলে চা-নাস্তার বিলটা ওই বেশিরভাগ সময় দিত। তার মানে এই নয় যে ওর অনেক টাকা ছিল, কিন্তু ওর মনটা ছিল বিশাল বড়। ওর মত স্বার্থপরহীন মানুষ আমি দুইটা দেখিনি। সবার জন্যই ও ছিল দরাজ দিল। আর বন্ধুত্তের জন্য ছিল পাগলের থেকেও বড় পাগল। ৩ যুগের এই স্বল্প সময়ে অনেক বেশি পেয়েছি ওর কাছ থেকে আমরা সবাই। ওর কোন শত্রু ছিলনা। দলমত নির্বিশেষে সবাই ওকে ভালবাসত। কি যে পাগলামি করতো বন্ধুদের জন্য! তাই বন্ধুরাও ওর জন্য ছিল পাগল। আমাদের সংগঠনের সব কাজের সবসময়ের জন্য অর্থ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ও ছিল অটোমেটিক চয়েজ। সৎ এর সর্বচ্চো উদাহারন ছিল ও। যে কোন প্রোগ্রাম এর পর যখন টাকায় শর্ট পড়তো, তখন বাকি টাকাটা ওই ম্যানেজ করে দিত। এত কস্ট করতো আমাদেরকে হাসিখুশি রাখার জন্য যে আমরা কখনই বুঝতে পারিনি ওর ভিতর অনেক অভাব, অভিমান, কস্ট জমা হয়ে ছিল। খুব জোরে জোরে কথা বলত আর কেউ উলটাপালটা কিছু বললেই সাথে সাথে রেগে যেত, তাই আমরা ওকে বলতাম ৪৪০ ভোল্টের আই,সি। ওকে অনেক নামে ডাকতাম, যেমনঃ মধু, বিটা, ইঞ্জিনিয়ার, ৪২০ ভোল্ট, জাপানী আই.সি, টাইটানিক, একে ফোরটি সেভেন, আরও কত কি। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বন্ধু চাদের খাতা স্যার কেড়ে নিয়েছিল,সে জন্য তুই তোর খাতা স্যার কে জমা দিয়ে বলেছিলি চাদের খাতা ফেরত না দিলে তুই পরীক্ষা দিবি না। সেই তুই কিনা এতোটা স্বার্থপর হয়ে গেলি রে বন্ধু। 
আমাকে ও ড্যাড বলে ডাকতো। আমি ডাকতাম বিটা বলে। কারন ওর দাদা আর আমার বাবা বন্ধু মানুষ ছিল তাই। আমাকে ড্যাড বলে ডাকাতে সবাই প্রথমে অবাক হয়ে যেত। ওর সাথে হাজার হাজার মধুর স্মূতি আছে আমার। ওর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বউকে আমি বউমা বলে ডাকতাম। সামনে আমাদের বন্ধন-৯৭ এর সুন্দরবন ৪ দিন ব্যাপি বিশাল ট্যুর। রাসেল ছিল প্রধান আয়োজকদের একজন। ওর শতসহস্র ব্যাস্ততার মাঝেও প্রায় ১০০ জন সদস্যদের প্রতেককে নিজে ফোন করত অংশগ্রহন কনফার্ম করার জন্য।
গতকাল সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর পথে এক ভয়াবহ রোড এক্সিডেন্টে ভালুকাতে নিজের গড়া মৎস্যখামারে যাবার পথে না ফেরার দেশে চলে গেছে সে। তার রক্তাত্ত জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমাদের বন্ধন-৯৭ এর বন্ধুদের নামের তালিকা ও ফোন নম্বর ট্যুরের যোগাযোগ করার জন্য। কি অদ্ভুত! মৃত্যুর সময়েও তার পকেটে আর মনে শুধুই বন্ধুরা। 
ও ছিল প্রচণ্ড ধার্মিক ও উচ্চশিক্ষিত। সারাক্ষন ইসলামিক বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষনা করতো। আমাদেরকেও সবসময় ধর্ম মেনে চলতে বলতো। বন্ধু, আজ তুই বেঁচে নেই, তুই হয়ত দেখছিসনা কিন্তু তোর জন্য কাদছেনা এমন কোন বন্ধু নাই। তুই সবাইকে ভালবাসা দিয়ে শুধু ঋণী করেই গেলি। তুই যে কি ছিলি আমাদের কাছে তুই নিজেও তা জানতিস না, বেটা। তুই আমাদের বুকের সবথেকে উচু জায়গায় ছিলি, আছিস, থাকবি আজীবন।
ও রাসেল, তুই কি শুনতে পারছিস বন্ধু? সেই তুই কিনা এতোটা স্বার্থপর হয়ে গেলি রে বন্ধু। তোর তুলনা তো তুই-ই। তোর সমতুল্য তো আর কেউ নাই।
রাসেল, ড্যাড আমার আর একবার আমাদের কাছে ফিরে আয়, তোকে যে আমাদের বড্ড বেশি দরকার। 
আল্লাহ তুমি আমার এই কলিজার টুকরা বন্ধুটিকে তোমার ভালবাসায় সিক্ত করে রেখো পরকালে এই ই চাওয়া তোমার কাছে মওলা.........।।


মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ও নাই, ও আছে...


আমি আছি, আমার ড্যাড নাই…!!!! চলে গেছে একেবারে সব ছেড়ে।।

রাসেল__চাদমারী মাঠের রাসেল__বন্ধন ৯৭ এর রাসেল__চুয়াডাঙ্গার গর্ব রাসেল___ইঞ্জিনিয়ার রাসেল__ বেটা রাসেল__মধু রাসেল___

রাসেল, আমাদের ব্যাচের সব থেকে মেধাবী, ভাল, সৎ, ভদ্র, সদাচারি, সদালাপি ও কর্মঠ ছেলেটির নাম। ৩ যুগেরও অল্প সময়ের জীবন পরিক্রমায় আমাদের সব বন্ধুদের প্রানভ্রমরাই পরিনত হয়েছিল। পরিচিত সবার কাছেই অত্যন্ত ভালবাসার ও আইডলে পরিনত হয়েছিল এই অল্প সময়ে। না বলে কোন শব্দ ছিলনা তার মুখে, দরাজদিলের হাতখোলা এক মানুষ ছিল সে। শিশুর মত মন ছিল ওর। যেমনঃ ও যখন কলেজে পড়ত, তখন আমরা যদি কখনও হাসির গল্প করতাম তখন ও হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ত, এমনকি কোন বন্ধু যদি দূর থেকেও যদি হাত ইশারায় কাতুকুতু দেবার ভান করত, তাতেও সে হেসে গড়িয়ে পড়ত। এতটাই সহজ মনের মানুষ ছিল ও। কলেজের সহপাঠিনীদের কেউ ওর সাথে কথা বলতে আসলে সে লজ্জায় লাল হয়ে যেত। কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ওর ছোট বোনের বান্ধবীর ভালাগার প্রস্তাবে রাজী হওয়া থেকেই ভালবাসা এবং ১২ বছর পর পড়াশোনা শেষে চাকরীতে যোগদানের পর তাকেই বিয়ে করা। কোনদিন আর কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাইনি। এমন কোন বন্ধু নাই যে তার কাছ থেকে কোন না কোন সময়ে উপকার পায়নি। এমনকি অন্যের স্কুল, কলেজ, বিস্ববিদ্যালয়ের কঠিন পরিক্ষাও নিজে সাহায্য করে শুধু পাশ নয় ভাল রেজাল্ট করিয়ে দিত। বন্ধুদের আড্ডার চা-পানি খরচটাও বেশিরভাগ সময় ওই বহন করতো। কোনদিন কোন বিনিময় নেয়নি কারও কাছে। সবার ও এত আদরের ছিল যে, সবাই ওকে “বিটা রাসেল” মানে বেটা রাসেল বা " মধু রাসেল " বলে ডাকতো। আমার কাছে ও ছিল বন্ধু, বেটা, শিক্ষক, খেলার সাথি সব সব।

আমার আদরের “ড্যাড” রাসেল আজ দুনিয়াতেই নাই। ও খুব বলতো, ড্যাড সামনে খুব খারাপ সময় আসছে, ইমান টিকিয়ে রাখাই খুব দায়, খুব সাবধান, আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিওনা। আরও বলতো দেখবে, সবাইকেই এক দিন বালিশ ছাড়াই শুয়ে পড়তে হবে।

আহ!!! ওর প্রভাব ও আন্তরিকতা ছিল এত গভির যে,,

- কোন প্রোগ্রাম করতে হবে? রাসেল কই, রাসেলকে ডাক।
- পিকনিক করতে হবে? রাসেলকে বল।
- ঘুরতে যেতে হবে? রাসেলকে বল সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।
- কোন অন্যায় হচ্ছে? রাসেল কই, ও জানলে খবর আছে।
- পড়া বুঝতে বা পরিক্ষা পাশে অসুবিধা হচ্ছে? রাসেল আছে না।
- বন্ধন ফাউন্ডেশনের ট্যুর করতে হবে? রাসেল সব ঠিক করে দেবে।
- হল্লা করে কোথাও বেড়াতে যেতে হবে? রাসেল কে জানাও।
- খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে? ওই যে রাসেল আছে।
- দলবদ্ধভাবে কারও অনুষ্ঠানে যাওয়া লাগবে? রাসেল তুই দেখ তো।

কত বললে রাসেল এর কথা বলা শেষ হবে জানিনা। ড্যাড, তোকে খুব খুব ভালবাসতাম। তোকে কখনও বাপের মায়ায়, কখনও বা ছেলের মায়ায় আবার কখনও বা প্রানপ্রিয় বন্ধুর ভালবাসায় ভালবাসতাম। আমাকে দুনিয়ার আর কেউ কখনও ড্যাড বলে ডাকবে না রে পাগল। তোর মত মানুষ কে বন্ধু হিসাবে পাওয়া কত বড় ভাগ্যের কথা তা শুধু আমারাই জানি। কত রাত চাঁদমারি মাঠে গল্প করতে করতে কেটেছে রে পাগল, কত স্মতি তোর সাথে। ছোটকালে আম্মা তোকে দেখিয়ে বলতো ওর মত করে পড়বি। তুই ছিলি পুতুলের মত দেখতে, কিছুটা বিদেশিদের মত। তুই যখন হাসতিস মনে হত দুনিয়াতে দুঃখ বলে কিছুই নাই। তুই ছিলি ৫ ওয়াক্ত নামাজি, আমাদেরও বলতি নামাজ পড়ার জন্য সবসময়। ঘন্টার পর ঘন্টা কলেজ লাইফে চাদমারী মাঠে আড্ডামারা, রাতে খাইরুলের ঘরে বসে রাতভর তোর সাথে গল্প, সারাদিন একিসাথে ৪ জন টিচারের কাছে পড়তে যাওয়া, আবার বিকালে একসাথে খেলা করা। আমাদের ১০-১১ জন বন্ধুর এটাই ডেইলি রুটিন ছিল কলেজ লাইফে। তুই ছিলি ট্রেডমার্ক ভাল ছেলে। যখন তুই কেবলই নতুন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিস, তখনও আমার ভার্সিটির পড়া শেষ হয়নি। তুই খুলনা থেকে ঢাকায় এসে চাকরি শুরু করলি। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এসে মাঝে মাঝে থাকতি। আমরা কখনও শহিদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে, অথবা আমার একুশে হলের খোলা ছাদে, অথবা বিপুলের জিয়া হলের রুমে অথবা ছাদে কত কত রাত পার করেছি আড্ডা দিয়ে। তোর সাথে থাকলে সময় কোন দিক দিয়ে চলে যেত টেরই পেতামনা। ২০০৩ সালে আমার কোন মোবাইল ছিলনা। তোর ছিল দামি একটা ফ্লোল্ডিং সেট। তুই রাতে হলের বিছানায় ঘুমিয়ে গেলে আমি তোর মোবাইলটা নিয়ে চুপি চুপি সারারাত গেম খেলতাম। তুই কখনও কিছু বলিসনি এই জন্য।
পাগল, তুই কি অভিমান করে চলে গেলি আমাদের উপর? আমরা তোর মত ভাল বন্ধু আর কখনই পাবনা। তুই শুধু দিয়েই গেলি, কিছুই নিয়ে গেলি না। সবার প্রথমে তুইই বালিশ ছাড়া একাই শুয়ে পড়লি?? কেন রে ড্যাড, কেন? আমরা আর কাকে নিয়ে সুন্দরবন ট্যুরে যাব? কে আমাদের সব দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়ে আমাদের বন্ধন৯৭ কে বেধে রাখবে? যে কোন অসুবিধায় পড়লে হাসতে হাসতে কে বলবে “ কোন ব্যাপার না, সব ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহ উপর ভরসা রাখো “।
আহ, জীবন ! আহ, ড্যাড !
ইয়া আল্লাহ, তোমার হাতে আমার এই বন্ধুটির ভার ছেড়ে দিলাম। তুমি ওকে দেখে রেখো জান্নাতুল ফেরদাউসে। ইয়া রাহমান, ওর কাজ ও স্বপ্নের মতই ওকে তোমার ছায়ায় স্থান দিও।

অনেকেই জিজ্ঞেস করে আমি এখনও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি?



অনেকেই জিজ্ঞেস করে আমি এখনও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি?

আপনিই বলুন, যেখানে আমার ৮০ বছর বয়সি বৃদ্ধ শিক্ষক বাবা প্রতিদিন কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা বই পড়েন, সেখানে আমার কতটুকু পড়া উচিত??

আব্বা ছবি তোলা পছন্দ করেননা। তাই তার অজান্তেই এই ছবি তোলার দুঃসাহস দেখিয়েছি। আব্বা নামাজে দাড়ালে আর বই হাতে নিলে সব ভুলে যান। আমি আমার আব্বার মত হতে চাই।

আপনাদের দোয়াটা পাব তো?

চেয়েছিলাম ৫ টাকা, দিলেন শতগুন বেশি।



আমার নানি আজ আমাকে ঈদিও দিয়েছেন। ২ বছর পর দেখা হল। এত বড় হয়ে গেছি, কিন্তু কোন ঈদ এ ঈদি দেননি এমনটি হয়নি। আমি দেখা করার সময় না পেলেও আম্মা এর হাতে ঠিকই আমার ঈদি দিয়ে দিয়েছেন। আমি তার কাছে সেই ছোট্ট নাতিই রয়ে গেছি আজ। তার ১৭ জন নাতি-নাতিন এর ভিতর আমি ৪ নং। উনি বয়স এর ভারে অনেক কিছুই ভুলে যান। আজ ঈদি দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। আমি মনে করিয়ে দেওয়াতে উনি স্মিত হেসে বড় একটা নোটের টাকা দিলেন। চেয়েছিলাম ৫ টাকা, দিলেন শতগুন বেশি।

এক সংগ্রামী চাকুরীজীবী "মা" এর গল্পঃ





এক সংগ্রামী চাকুরীজীবী "মা" এর গল্পঃ

এই "মা" আজ তার ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেলেন......... 

ছোট্ট একটি মেয়ে। অসম্ভব মেধাবী। ৯ ভাইবোনের সংসারে ২য় বড় সন্তান। বাবা ছিলেন চিনি কলের কমকর্তা। অভাবের সংসার। বাকি ছোট ৭ ভাইবোনকে কোলেপিঠে করে মানুষ করা। ভারী সংসার তাই ১৬ বছর বয়সে মেট্রিক পাশের পরই বিয়ে হয়ে যায় অত্যন্ত সৎ নিম্নবিত্ত এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ছেলের সাথে। জমিজমা বলেও কিছুই ছিলনা। স্বামীও ছিল অনেক ভাইবোনের বড়। স্বামীর সংসারে ছিল ননদ ও দেবরদের একগাদা ছেলেমেয়ে। স্বামি অত্যান্ত ভাল ও দরদি মানুষ ছিলেন, তাই ভাই-বোনের অনেকগুলো ছেলে মেয়েকে নিজের কাছে রেখে পড়া লেখা শিখিয়েছিলেন।

কিশোরী মেয়েটি নতুন সংসারে এসেই শুরু করল অমানুষিক পরিশ্রম। সাথে নিত্য কঠিন অভাব। বিয়ের কিছুদিন পর কোল জুড়ে আসলো ১ম সন্তান। সন্তান কোলে করেই ভর্তি হলেন কলেজে। লেখা পড়া করে কিছু একটা করে যেন কিছুটা হলেও সংসারে অভাব কমে। এর কয়েক বছর পর হল ২য় সন্তান। মা ততদিনে কলেজ থেকে এইচ,এস,সি ও ডিগ্রী পাশ করে সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করা শুরু করেছেন। ২ সন্তান কোলে করেই উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন, আবার চাকরীও করেছেন একইসাথে। তার ২ সন্তানের সাথে ছিল আরও শ্বশুরকুলের আত্বীয়ের ৪ সন্তান। এই অমানুষিক পরিশ্রম আর অর্থনৈতিক কষ্টের যাতাকলে হয়ে গেলেন মৃত্যু পথযাত্রি। তখন ১৯৯১ সন। সেই শুরু কঠিন রোগের। আজ অব্দি ভুগছেন। স্বামিও কঠিন অসুস্থ গত ৩৯ বছর ধরে। কিন্তু নিজের সমস্ত কাজ, চাকুরি, সন্তান পালন, স্বামির সেবা, সামাজিকতা, শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য কর্তব্য সব কিছুই একা হাতে সামলেছেন।
 

বাসার পাশেই ছিল সরকারি সদর হাসপাতাল আর অনেক ক্লিনিক। আত্বীয় স্বজন যারা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে আসত, তাদের সাথের লোকজন সব উনার বাসায় উঠতো। সারাদিন চাকরি শেষে সন্ধাবেলা এসে প্রায় প্রতিদিনই উনাকে অনেক জনের জন্য অতিথিসেবা করতে হত। অভাবের জন্য বাসায় কখনও কাজের লোক রাখতে পারেননি। কখনও রাত ১ টার আগে ঘুমাতে যেতে পারেননি, আবার ফজরের আযান দেবার সাথে সাথে উঠে বাসা পরিস্কার, উঠোন ঝাড়ু দেয়া, রান্না করা, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিজে চাকুরিতে যাবার জন্য তৈরী হতে যেয়ে প্রায় দিনই না খেয়ে স্কুলে চলে যেতেন। আবার বিকালে এসে মধ্যরাত পর্যন্ত চলত গাধার খাটুনি সেই অসুস্থ শরির নিয়েই। এক মুহুর্তের জন্যও মুখটাকে কখন কালো করেননি। এত কিছুর ভিতরেও মুখে হাসি লেগেই থাকে। নিজের তিল তিল করে সঞ্চিত অমানুষিক কষ্টের টাকা দিয়ে স্বামির কেনা জমির উপর একটি সুন্দর বাড়িও বানিয়েছেন।

হ্যা, এতক্ষন যে মায়ের কথা বলছিলাম উনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন। মায়ের কঠিন অসুস্থতা আর কষ্টের মাঝেও কখনও যদি একটুও অসুস্থ হয়েছি বা বিপদে পড়েছি, আমাদের ২ ভাইকে পাগলের মত সেবা ও সাহায্য করেছেন। নিজে কখনো ভাল পোশাক পরেননি, নিজের কোন সাধ ছিলনা তার। আমাদের ২ ভাইকে করেছেন উচ্চশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। মা, আমাদেরকে কখনো ভাল পোশাক বা খেলনা কিনে দিতে পারেননি। কিন্তু আমাদের তাতে কখনো কষ্ট হয়নি। কারন আমার মায়ের সেই সাধ্য যে ছিলনা। উনি আমাদেরকে শুধু শিক্ষা কিনে দিয়েছেন। আমরা তাতেই কৃতজ্ঞ।

মা গো, তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি কস্ট ছাড়া। মা গো, তুমি আমার এই অক্ষমতা কে ক্ষমা কোরো। মা গো, আমি তোমার অধম সন্তান। মা গো, তোমার আচলের ছায়া থেকে যেন আল্লাহ কখনো বঞ্চিত না করেন। মা গো, তুমি ভাল থেকো।

নিজের মূল্য জানুন।

একদা এক কাক খুব সুখে বসবাস করছিল। হঠাৎ একদিন তার সাথে এক বকের দেখা হল। সাদা ধবধবে বকটিকে দেখে মনে খুব কস্ট পেয়ে ভাবল, আহা, বকের কি সাদা গায়ের রঙ। নিশ্চয় বকই সবচেয়ে সুখি পাখি। সে বকের কাছে যেয়ে খুব দুঃখের সাথে জিজ্জেস করল, তুমি সবচেয়ে সুখি পাখি তাইনা?
বক উত্তরে বলল, হ্যা, আমি তাই ভাবতাম। কিন্তু যেদিন আমি টিয়া পাখিকে দেখেছি সেদিন বুঝেছি টিয়ায় সবথেকে সুখি পাখি, কেননা তার গায়ে দুটি সুন্দর রঙ, আমার তো শুধুই সাদা।

কাক তখন টিয়ার কাছে যেয়ে একই প্রশ্ন করল। টিয়া বলল, হ্যা আমিও নিজেকে সবথেকে সুখি পাখি ভাবতাম, কিন্তু যেদিন আমি বহু সুন্দর রঙ বিশিষ্ট ময়ুরকে দেখলাম, সেদিন আমার ভুল ভেঙেছে। ময়ুরই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি পাখি। কাক তখন খুজতে খুজতে চিড়িয়াখানায় ময়ুরের দেখা পেল। ময়ুরকে দেখার জন্য সেখানে হাজার মানুষের ভিড়। সন্ধার সময় যখন ভিড় কমল, তখন কাক ময়ুরকে প্রশ্ন করল, তুমি তো দেখি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি পাখি তাইনা, সবাই তোমাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে থাকে।

ময়ুর তখন উত্তরে বলল, দেখো বন্ধু, আমার এই সৌন্দর্যের জন্যই আমার জন্য আমাকে খাচায় বন্দি থাকতে হয়। আমি কখনই মুক্ত পৃথিবীর দেখা পাইনা। আমার মনে হয়, তুমিই (কাক) একমাত্র পাখি যাকে কেউ খাচায় বন্দি করেনা। তুমি ইচ্ছামত যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও। তাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি পাখি তুমিই, বন্ধু।


শিক্ষাঃ

আমরা সবসময় আমাদের গুন ও আমাদের যা আছে সেগুলোকে কম মনে করি, অন্যদের গুনগুলো বা প্রাপ্তিকে কে বড় ভাবি। যা মানুষকে অসুখি করে তোলে। নিজেকে মূল্যায়িত করতে শিখুন, বন্ধু।

ও মানুষ বলতে পারিস তুই কবে মানুষ হবি।


রোহিঙ্গা শিশু। নাম বেলাল। বয়স ৯।
সেন্টমার্টিনে যাবার পথে কেয়ারি কুতুবদিয়া জাহাজের চা বেয়ারার। সারাক্ষন ছুটোছুটি করে হাসি মুখে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ তার ঐটুকু ছোট্ট কাধেই ৫ জন মানুষের প্রতিদিনের খাবারের ভার!
বার্মার পিশাচ সেনাবাহিনীর গনহত্যার মুখে টানা ৯ দিন পায়ে হেটে সপরিবারে বন জংগল ভেঙ্গে এদেশে আসা। আসার পথে দুপায়ে গুলি খেয়ে বাবা পঙ্গু। ৩ ভাইবোন। কারও কোন কাজ নাই। খাবার নাই, পোশাক নাই, আশ্রয়টাও নাই ঠিকমত।
সে বড় ছেলে। কোনরকমে এই জাহাজে চা বিক্রির চাকুরি নিয়ে এই ছোট্ট শিশুটি সকাল ৭ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সারাটা জাহাজ ঘুরে ঘুরে চা সরবারহ করে পর্যটকদের। ১০০০ টাকার চা বিক্রি করলে বিনিময়ে ক্যান্টিন মালিকের কাছ থেকে ২০ টাকা পায়। কয়েকমাসেই পেটের দায়ে বাংলা ভাষাটাও খুব ভাল করে রপ্ত করে নিয়েছে। মুখে একটুও কষ্টের ভাজ নাই। সারাক্ষন হাসতে থাকে। সবার সাথে মায়া করে কথা বলে। কোন অভিযোগ নাই তার এত কষ্টের জিবন নিয়ে। কারও কাছে ১ টাকা ভিক্ষাও চাইনা। শুধু জানে তাকে কাজ করতে হবে সংসারের বাকি ৪ জনের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য। দৌড়ে কাজ করে চলে সারাটাদিন মুখে ঝকঝকে হাসি নিয়ে।
ওর ঐ হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে এক অজানা অপরাধবোধে। ওকে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে অদৃশ্য পানিতে চোখ ভরে উঠে, মানুষ হিসাবে নিজের অপারগতা লাঘবের কিছুটা অপচেস্টা করি।
কি দোষ ছিল ওদের, যে আমরা মানুষ হিসাবে ওদের সাথে পশুর মত আচরন করেছি। করেছি সর্বহারা!!
ও মানুষ বলতে পারিস তুই কবে মানুষ হবি।।।।।।

সৃষ্টিকর্তার সাথে সাক্ষাত।



এক ছোট্ট বালকের ইচ্ছা হল সে সৃষ্টিকর্তার এর সাথে দেখা করবে। সে জানতো সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা করতে গেলে বহুপথ পাড়ি দিতে হবে। তাই সে ছোট্ট পুটলিতে করে কিছু খাবার ও পানি নিয়ে রওনা দিল।
বেশ কিছুপথ যাবার পর তার সাথে রাস্তার পাশে বেঞ্চে বসা এক বৃদ্ধের সাথে দেখা হল। বালকটি তার পাশে বসল ও খাবার জন্য পুটলি খুলে কিছু খাবার বের করল। তখন লক্ষ্য করল, বৃদ্ধটিকে খুব ক্ষুধার্ত লাগছে, তখন সে নিজে না খেয়ে বৃদ্ধটিকে খাবারগুলো দিল।বৃদ্ধটি তার দিকে তাকিয়ে ফোকলা দাতে প্রানখোলা হেসে খাবার খেল।
বৃদ্ধের হাসিটি তার কাছে এত সুন্দর লাগল যে সে আবারও তার হাসি দেখার জন্য খাবার দিল। বৃদ্ধের সেই হাসি দেখে বালকটি আবার অনেক খুশি হল। 
তারা কোন কথা না বলেই একসাথে বসে খেল ও হাসাহাসি করে দিনটি পার করল।যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসল, তখন ক্লান্ত বালক বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়ে কয়েক পা না এগোতেই আবার ফিরে এসে বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরল।বৃদ্ধও বালকটিকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ হাসিটি উপহার দিল।
সন্ধ্যায় বালকটি ঘরে পৌছলে ছেলের অতি আনন্দিত মুখ দেখে মা অবাক হয়ে বলল, বাবু তোমাকে আজ এত খুশি দেখাচ্ছে কেন? সে বলল, মা আজ আমি সৃষ্টিকর্তার সাথে দুপুরে খেয়েছি। জান মা, সৃষ্টিকর্তার হাসি অনেক সুন্দর, দেখলে অবাক হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে বৃদ্ধটিও খুশি মনে বাড়ি পৌছল। তার ছেলে বাবাকে বলল, বাবা তোমাকে এত খুশি লাগছে কেন? বৃদ্ধ উত্তর দিল, বেটা, আজ আমি সৃষ্টিকর্তার সাথে বসে দুপুরে খেয়েছি। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে বয়স্ক মনে করেছিলাম, তিনি দেখতে অনেক কমবয়স্ক ও সুন্দর।

শিক্ষনীয়ঃ

ভাল চিন্তা ভাল ঘটনার জন্ম দেয়। হাসি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া অনেক বড় উপহার। নিজে হাসুন, অন্যকে হাসতে সাহায্য করুন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের অন্তরেই বাস করেন। ভাল কাজ করুন, অপরের ভাল ভাবুন। সৃষ্টিকর্তার আপনাকে নিশ্চয় পুরস্কার দিবেন। 

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

জয়ী হতে নিজের ভিতরের সিংহটাকে বের করে আনুন।

জয়ী হতে নিজের ভিতরের সিংহটাকে বের করে আনুন


বনের সবচেয়ে বড় প্রানী কোনটা?
জানি বলবেন, হাতি।
বনের সবচেয়ে লম্বা প্রানী কোনটি?
আপনি বলেন, জিরাফ।
বনের সবচেয়ে জ্ঞানী প্রানী কোনটি?
বলবেন, শিয়াল ছাড়া আবার কে।
বনের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রানী কোনটি?
অবশ্যি বলবেন, চিতাবাঘের নাম।

যদি বলি বনের প্রানীদের রাজা কে?
জানি আপনি একবাক্যে বলবেন, সিংহ।।

অথচ খেয়াল করুন উপরের কোন গুনাবলীইই তার নাই। তবুও সে বনের রাজা।
কেন???

কারন সে সাহসি ও নির্ভিক। সিংহ দৃঢ় পদক্ষেপে হাটে, সে ডরায় না কখনো, কাউকে ভয় পাইনা। সে বিশ্বাস করে কেউ তাকে থামাতে পারবেনা। সে শিকারের খোঁজে সবসময় ঝুকি নেয়। সে বিশ্বাস করে দুনিয়ার তাবত প্রানীই তার খাদ্য। সে সামান্য সুযোগ পেলেও চেস্টা করতে ছাড়েনা, সে কোন কিছুকেই তার থাবা থেকে ফস্কাতে দেয়না। সিংহ তাই এক অসাধারন প্রতিভা।


সিংহ থেকে আমরা যা শিখতে পারিঃ
জিবনে সফল হতে হলে, আপনাকে দ্রুততম হতে হবে না, সবথেকে জ্ঞানীও হতে হবে না, খুব স্মার্টও হতে হবেনা, অনেক ব্রিলিয়ান্ট হবারও দরকার নাই। আপনার যা দরকার তা হচ্ছে, কিছু করার সাহস, মন থেকে করা, সর্বোচ্চ চেস্টা করা, নিজের প্রতি বিশ্বাস করা যে আপনার দ্বারাই সম্ভব, আপনিই পারবেন।
এখন আপনার পালা, নিজের ভিতরের সিংহটাকে বের করে আনুন। সফলতা আপনারই হাতে।

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ভাল থাকার জন্য ভাল মানুষ হবারও কোন বিকল্প নাই।

মানবতার কোন ধর্ম নাই; জাতের কোন বর্ণ নাই। শিক্ষার কোন বয়স নাই; জানার কোন শেষ নাই। ব্যার্থতার কোন হিসাব নাই; সফলতার কোন সংঙ্গা নাই চাহিদার কোন শেষ নাই; জ্ঞানের কোন সিমা নাই। দারিদ্রে কোন লজ্জা নাই; সম্পদেও কোন সুখ নাই। ভালবাসার বয়স নাই; ভাললাগার শেষ নাই। বেচে থাকার কোন বিমা নাই; সফলতার কোন সিমা নাই। সময়ের কাজ অসময়ে করলে তার কোন মূল্য নাই। ভাল থাকার জন্য ভাল মানুষ হবারও কোন বিকল্প নাই। তাই, মানুষের মত মানুষ হতে হলে তাই রে নাইরে করে জীবন কাটানোর কোন মানে নাই....

শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আপনি কি স্মার্ট এইচ আর ম্যানেজার ?

একটি প্রতিষ্ঠান নানান ধর্মের, বর্ণের, চরিত্রের, গোত্রের, পেশার, বিশ্বাস মূল্যবোধের মানুষের সমন্বয়েই তাহার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে নিজস্ব চিন্তাভাবনা বৈশিষ্ঠ্য এইসব বহুমতের বহুপথের মানুষের সফল সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একজন দক্ষ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন এইচ আর ম্যানেজারের কাজের ধরনেও ভিন্নতা রয়েছে একদিকে যেমন এইচ আর এর উপর উচ্চতর ডিগ্রীধারি আধুনিক এইচ আর অনুশীলনকারী মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক রয়েছেন, তেমনি আছেন এইচ আর এর উপর উচ্চতর ডিগ্রী ছাড়াই গতানুগতিক ধারার অনুশীলনকারী মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক


একেক প্রতিষ্ঠানে এইচআর বিভাগের কর্মীদের একেকনামে ডাকা হয় কোথাও এইচআর ম্যানেজার, কোথাও পিপলস ম্যানেজার, কোথাও এমপ্লয়ী রিলেশন ম্যানেজার, কোথাও বা এইচআর বিজনেস পার্টনার যে নামেই এটাকে ডাকা হোক না কেন, এইচআর ম্যানেজারের প্রধান কাজ প্রতিষ্ঠানের মালিক তথা ম্যানেজমেন্ট এবং এমপ্লয়ীদের মধ্যে যোগাযোগ সেতু মুখপাত্র হিসাবে কাজ করা আর এই একবিংশ শতাব্দিতে কাজটিই সুচারুভাবে করতে যেয়ে  নতুন নতুন এইচআর মতবাদ, পন্থার আবিষ্কার ব্যাবহার শুরু করতে হয়েছে মানব সম্পদ ব্যাস্থাপনায় কারন বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ সুশিক্ষিত তাই তারা অনেক বেশি সচেতন তাদের কর্ম ক্যারিয়ার নিয়ে প্রত্যাশার পারদটাও তাই অনেক বেশি এইচআর ম্যানেজারের কাছে
এইচআর ম্যানেজারের মুলকাজ যেমন দক্ষ এমপ্লয়ী নিয়োগ, প্রশিক্ষিতকরন, টার্নওভার কমানো, এমপ্লয়ী  রিটেনশন কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানের প্রতি অন্তরঙ্গতা আনুগত্য বৃদ্ধি, সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এইচআর ম্যানেজারকে অবশ্যই তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মনন প্রত্যশাগুলো বোঝা, কাজের উৎসাহ স্বীকৃতি প্রদান, যেকোন প্রয়োজনে সাড়া দেয়া, কর্মীদের মধ্যে সম্মান বিশ্বাসের ভিত মজবুত করা, অংশগ্রহনমূলক সিদ্ধান্তগ্রহন পদ্ধতি এবং পারস্পারিক সুসম্পর্ক মূল্যবোধের সংস্কৃতি তৈরি করা


ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি!

ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি! যারা এমন চিন্তায় আছেন তারা ঠিক লাইনেই আছেন। কারন আপনি কেন জব চেঞ্জ করতে চান তা আপনার থেকে ভাল কে...