সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮

একটি অতশীপর বৃদ্ধা ও গাবতলী কাহিনী

 
অসুস্থ বাবা-মাকে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর জন্য আনবো বলে অফিস শেষ করে গাবতলী টার্মিনালে আসা দেশের বাড়িতে যাবার জন্য। কিন্তু বিধিবাম। গাড়ি মিস। বসে বসে পরবর্তী বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। ইতিমধ্যে এই অতশীপর  বৃদ্ধার আগমন। পাশে বসলেন। আছেন কেমন জিজ্ঞেস  করতেই ফোকলা দাতের ভূবন মোহিনী হাসি দিয়ে শুরু করলেন তার শত বছরের জীবনের গল্প। ফরিদপুরে জন্ম। উনি এখন নাতি-পুতিনের বিয়ে দিয়ে এখন ঢাকার গাবতলি টার্মিনালে সেটেল হয়েছেন। সারাদিন ঘোরেন-ফিরেন টার্মিনাল জুড়ে। রাতে ফুটপাতেই ঘুমান। টার্মিনালের সবাই উনার নাতি হন। কোন পিছু টান নাই। খুব একটা দুখবোধও নাই। চোখে দেখেন না বললেই চলে। দাত বলে কিছু নাই। সারা মুখে বয়সের বলিরেখা।
 
প্রায় মিনিট ৩০ গল্প হল। আমার মনটা অসম্ভ রকম খারাপ ছিল। মনটা বেশ হাল্কা হল উনার সাথে গল্প করাতে। এই শতবর্ষী  বৃদ্ধার সাথে গল্প করতে করতে রাতের গাড়ি চলে এল। উঠার সময় উনার সাথে ছবি তোলার কথা বলতেই উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, "তোরা বাপু কেমন পোলা, লজ্জা শরম নাই, ছবি তোলার কথা বলিস। আর দেখিস না আমি চোখে দেখিনা।" বৃদ্ধা দাদীর ধমক খেয়ে মনটা স্নেহে ভরে গেল। পরে দাদীকে কোন রকমে রাজী করিয়ে এই ছবি তোলা।
 
এই বয়সেও কারও প্রতি কোন অভিযোগ নাই তার। আর আমরা শুধুই অভিযোগ এর ডালি নিয়ে বসে থাকি সবসময়। নিজেকে খুব অশিক্ষিত মনে হল এই শতবর্ষী বৃদ্ধার কাছে। কথার মাঝেই হঠাৎ করে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলেন আপন মনে। এইভাবে ঠুস  করে কিছু না বলে চলে যাওয়াতে আমার একটু মন খারাপ হল। পরক্ষনেই মনে হল উনি তো আমার সাথে আপন নাতির মতই কথা বলেছেন, আপন মানুষের সাথে তো এত ফর্মালিটি দেখানোর কিছু নাই।
 
আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের আপন মানুষগুলোর সাথে ফর্মালিটিস দেখাতে যেয়ে আপনত্বকেও কৃত্রিম করে ফেলছি। জমিয়ে ফেলছি অনেক অনেক অভিযোগ। বাড়ছে কষ্টবোধ। জীবন হচ্ছে জটিল।
 
দাদী, আপনি ভাল থাকুন। দোয়া করবেন যেন অভিযোগ নয়, ভালবাসতে শিখি অকৃত্রিমভাবে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা

  জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হব...