শীতের পড়ন্ত এক দুপুরে বসে ছিলাম আমার এক পরিচিত একজনের ওষুধের দোকানে (ভিতরে বসা) কিছুটা অলস সময় তার সাথে গল্প করে পার করার উদ্দ্যেশে। কিন্তু সাক্ষি হলাম এক মহৎ মানব সেবার। দোকানের মালিক বয়সে যুবক। দেখতে সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান। ডাকনাম খোকন। অত্যন্ত হাসিখুশি একটা মানুষ। চুয়াডাঙ্গা শহরের কেন্দ্রস্থলে ব্যাস্ততম ওষুধের দোকান তার।আমি দেশের বাড়ি গেলে সময় পেলে প্রায়ই বসি তার দোকানে। ছিলাম তার দোকানে প্রায় ৩ ঘন্টা। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের একাধিক নারী-পুরুষ তার দোকানে আসলো ওষুধ কেনার জন্য। লক্ষ্য করলাম বেশিরভাগ লোকই তার দোকানে এসে নিজেদের সমস্যার কথা বলে জিজ্ঞাস করে কি ওসুধ খেতে হবে? কেউ আসে ওষুধ নেবার জন্য, কেউ আসে ইঞ্জেকশন দেবার জন্য, কেউ আসে প্রেশার মাপানোর জন্য, কেউ আসে এক্সিডেন্ট করে ড্রেসিং করার জন্য, কেউ বা আসে তার ঠিকমত টাকা নাই তাই কম টাকা দিয়ে ওষুধ নেবার জন্য, কেউ বা আসে শুধুই গল্প করার জন্য। সে হাসিমুখে সবার কথা শুনে। একইসাথে নিজেই নার্স, কম্পাউন্ডার, ডাক্তার, ফার্ষ্টএইডার, সেলসম্যান, মালিক, গল্পকারির, কর্মচারির, আবার দোকানের ঝাড়ুদারের ভূমিকা পালন করে। সাজেশন দেয় রুগির সাধ্যের ভিতর সব থেকে ভাল ও খরচ কম হবে এমন ওষুধের। সেবার জন্য সে কোন পয়সা নেয়না।এইভাবেই সেবা করে যাচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। বাবা ছিলেন এলাকার নামকরা প্যারামেডিক ডাক্তার। বাবার কাছ থেকেই দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা শেখা। বেশ কয়েক বছর ইতালিতে কাটিয়ে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে বাবার এই ওষুধবিক্রি ব্যাবসায় নাম লেখানো। সাথে করে যাচ্ছে বিনাপয়সায় মানবসেবা। সারাটাসময় মুখের হাসিটা একটুও মলিন হয়না তার। খুবই বন্ধুবাৎসল। বন্ধু বা পরিচিত কেউ দোকানে আসলে শত ব্যাস্ততার মধ্যেও আপ্যায়ন করতে ভুল হয়না। শত ব্যাস্ততার মাঝেও পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিতে ভুল হয়না। ভাবখানা এমন যেন সবাই তার আত্বীয়, তার বাসায় বেড়াতে এসেছে। কোন গরিব মানুষ দোকানে ওষুধ কিনতে আসলে যদি টাকায় কম পড়ে সে হাসি মুখে তা নিয়ে নেয়।ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্যই বিনাপয়সায় ছোটখাট ওসুখের জন্য চিকিৎসাসেবা দেয়। আবার গরিব মানুষ সাহায্যের জন্য আসলে যতটুকু পারে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে দোকান খুলেই শুরু হয় তার ওষুধ বিক্রি ও সাথে এই বিনা পয়সার মানবসেবা, চলে মাঝরাত পর্যন্ত। এমনকি পরিচিত মানুষ অথবা বন্ধুবান্ধব এর কোন আত্বীয়স্বজন রাতবিরাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জানালে বাসায় যেয়ে সেবা দিয়ে আসে। সৌভাগ্যক্রমে তার বন্ধুত্ব আমি পেয়েছি। নিরবে নির্ভিতে অসংখ্য মানুষকে এইভাবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। কেউ হয়তো খেয়ালও করেনা তার এই মানবসেবা। সেও প্রতিদানের আশা করেনা কখনও।এইভাবে হয়তো দেশের আনাচে কানাচে কতশত খোকন মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে কোনকিছুর প্রত্যাশা না করেই। এদের জন্যই হয়তো আজও আমরা শত অভাব আর অন্যায়ের মাঝেও সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখি, মানবতার মানে খুজি।আসুন আমরা সবাই মিলে মানবতাকে আকড়ে ধরি, যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত অন্যের জন্য করার চেষ্টা করি। সিনেমার সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায় হিরো না খুঁজে নিজেরাই মানবতার সেবা করে বাস্তবের হিরো হই। তাতে মানুষ হিসাবে আমরাই মূল্যবান হব, হব সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজ হবে সুন্দর, দূর হবে অন্ধকার।
The blog purpose is to share the real life learning & gear up the level of motivation to achieve Life Goal & make yourself Happy.
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮
একজন সেবক ও যুবকের কাহিনী
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা
জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হব...
-
মানবতার কোন ধর্ম নাই; জাতের কোন বর্ণ নাই। শিক্ষার কোন বয়স নাই; জানার কোন শেষ নাই। ব্যার্থতার কোন হিসাব নাই; সফলতার কোন সংঙ্গা নাই চাহিদার...
-
ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি! যারা এমন চিন্তায় আছেন তারা ঠিক লাইনেই আছেন। কারন আপনি কেন জব চেঞ্জ করতে চান তা আপনার থেকে ভাল কে...
-
শিবলীর অদম্য ইচ্ছাই বড় হওয়ার সাহস জুগিয়েছে জাগো নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২০ 1.6K SHARES ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন