রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

নিজের শিকড়কে অবজ্ঞা করবেন না, বন্ধু।

নিজের শিকড়কে অবজ্ঞা করবেন না, বন্ধু।  

   এক গ্রামে একটি বড় আম গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় প্রতিদিন একটি বালক খেলা করত, গাছের ডালে চড়তো, আম পেড়ে খেত ও প্রায়ই গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ত। সে গাছের সাথে খেলতে খুব পছন্দ করত, আর গাছটিও তাকে খুব ভালবাসত। বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে গেল এইভাবে। এক সময় সে আর গাছ তলায় খেলতে আসা বন্ধ করে দিল। 
কয়েক বছর পর একদিন বালকটি গাছের কাছে ফিরে আসল বিষন্ন মুখে। গাছটি তার দিকে তাকিয়ে বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। সে তখন বলল, আমি আর এখন বালক নেই, আমি বড় হয়ে গেছি। আমার এখন খেলনা চাই, সেগুলো কেনার জন্য টাকা দরকার। গাছটি বলল, বাবু আমার কাছে তো কোন টাকা নাই, তবে তুমি আমার আমগুলো পেড়ে নিয়ে যাও এবং তা বিক্রি করে তোমার খেলনা কেনো। বালক অতি আনন্দের সহিত গাছের সবগুলো আম পেড়ে নিয়ে চলে গেল, কিন্তু আর ফিরে এলনা। গাছটি অপেক্ষায় ছিল সে হয়তো ফিরে আসবে, কিন্তু আসল না। তার ফিরে না আসাতে গাছটি খুব দুঃখ পেল।

বহুদিন পর বালকটি যখন আবার আম গাছের কাছে ফিরে আসলো তখন সে যুবক। গাছটি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। সে তখন বলল, আমার এখন সময় নাই, আমার পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি করা লাগবে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পার? গাছটি বলল, আমার তো বাড়ি নাই, কিন্তু তুমি আমার ডালপালা গুলো কেটে বাড়ি বানাতে পার। সে তখন গাছের সব ডালপালা কেটে নিয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেল। গাছটি বালকটির আনন্দ দেখে খুশি হল, কিন্তু তারপর সে আর ফিরে এলনা। গাছটি আবার একা হয়ে গেল ও খুব দুঃখ পেল।

 বহু বছর পর এক গ্রীষ্মদিনে লোকটি আবার গাছের কাছে ফিরে আসলো। গাছটি তাকে দেখার সাথে সাথেই খুশি হয়ে গেল ও বলল, আসো আমার সাথে খেলা কর। লোকটি বলল, আমি এখন বয়স্ক হয়ে গেছি। আমার এখন একটা নোকার দরকার অবসর সময়ে মাছ ধরে আনন্দমুখর সময় কাটানোর জন্য। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পার। গাছটি বলল, আমার তো কোন নোকা নাই, তবে তুমি আমার গুড়িটি কেটে তা দিয়ে নোকা বানাতে পার। লোকটি গাছের গুড়িটি কেটে নিয়ে নোকা বানিয়ে মনের আনন্দে নোকা বাইতে চলে গেল, আর ফিরে এলনা বহুদিন। 

একদিন আবার লোকটি গাছের গোড়ায় ফিরে আসল, তখন সে থুরথুরে বৃদ্ধ। গাছটি তাকে দেখে বলল, বাবা এখন তো আমার তোমাকে দেবার জন্য আম নাই। লোকটি বলল, আমার এখন আম খাবার মত দাতও অবশিষ্ট নাই। গাছটি বলল, আমার তো কোন গুড়িও নাই যাতে তুমি চড়তে পার। লোকটি বলল, আমারও আর চড়ার শক্তি নাই। গাছটি বলল, আমার কাছে শুধু আমার শিকড় ছাড়া তোমাকে দেবার আর কিছুই নাই। ওগুলোই নিয়ে যাও। বৃদ্ধ লোকটি বলল, না, আমার আর ওসবেরও কোন দরকার নাই। আমি এখন আর আর নড়াচড়া করতে পারিনা ঠিকমত। আমি তোমার শিকড়ের উপরই বিশ্রাম নিতে চাই শেষ বয়সে। গাছটি বলল, আসো আমার উপর বস ও বিশ্রাম নাও। বৃদ্ধটি গাছের শিকড়ের উপর বসল এবং গাছটি অনেক খুশি হল ও হাসল। 

গাছটি আসলে আমাদের বাবা-মায়ের প্রতিক। আমরা যখন ছোট থাকি তাদের সাথে খেলতে ভালবাসি, বড় হলেই তাদেরকে একা করে চলে যায় নিজের প্রয়োজনে, যখন কিছুর দরকার পড়ে আমরা আবার ফিরে আসি তাদের কাছে। আমাদের সব আবদার তারা হাসিমুখে পূরন করে। কিন্তু আমরা ফিরেও চাইনা তাদের দিকে। ভুলে যায় তাদের অবদানের কথা। নিজেদের নিয়েই মত্ত থাকি। বাবা-মা তাদের সবকিছুই উৎসর্গ করেন সন্তানের জন্য, বিনিময়ে হয়ত একটু সঙ্গ চান। তারা চান আমরা যেন একটু হাসিমুখে কথা বলি, তাদের পাশে থাকি। যেন অবজ্ঞা না করি। 
 
আসুন না, খুব বেশি দেরি হবার আগেই বাবা-মাকে অন্তত এতটুকু সময় দেয়, সন্মান করি, ভালবাসি। না হলে যেদিন এই গাছরুপি বাবা-মা হারিয়ে যাবে সেদিন কেঁদেও কোন লাভ হবেনা। আর আপনিও একদিন বাবা অথবা মা হবেন, তাইনা? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা

  জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হব...