আমার নেওয়া গতকালের একটি ইন্টার্ভিউ এর ঘটনা শেয়ার করব আজ। আমি গতকাল টেরেটরি সেলস এক্সিকিউটিভ পজিশনের জন্য ইন্টার্ভিউ নিচ্ছিলাম। ক্যান্ডিডেট নামকরা একটি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং এ অনার্স ও মাস্টার্স করেছে। সে খুব স্মার্টলি ইন্টার্ভিউ রুমে প্রবেশ করল। সেই ক্যান্ডিডেট সাথে কথপকথন এর কিছু অংশ তুলে ধরছিঃ
আমিঃ
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
ক্যান্ডিঃ
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে গ্রাজুয়েশন করা আর তার বাড়ি কোথায় এটা বলে চুপ হয়ে গেল।
আমিঃ
আর কিছু বলতে চান?
ক্যান্ডিঃ
না, স্যার।
আমিঃ
আপনার কোন এক্সট্রা ক্যারিকুলারের গল্প নাই?
ক্যান্ডিঃ
না স্যার, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু আধটু পলিটিক্স করতাম, তাই আর অন্য কিছু করিনি।
আমিঃ
তাহলে আপনার পলিটিক্সের গল্পই বলেন।
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আসলে ওখানে তেমন কোন কিছু ছিলাম না। ঘুরে বেড়িয়েছি আর আড্ডা দিয়েছি।
আমিঃ
আচ্ছা তাহলে আপনি কোথায় কোথায় ঘুরেছেন সেটা বলেন।
ক্যান্ডিঃ
স্যার, ঢাকার আর নিজের এলাকার বাইরে তেমন কোথাও ঘুরিনি।
আমিঃ
আপনি তো ৩ বছর হল গ্রাজুয়েশন করেছেন। এই ৩ বছর কি করেছেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, টিউশনি করাই।
আমিঃ
সরকারি চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছেন না বা বেসরকারি চাকুরীর ইন্টার্ভিউ দিচ্ছেন না?
ক্যান্ডিঃ
আমার অত পড়তে ভাল লাগে না তাই সরকারি চাকুরীর চেষ্টা করিনা।
আমিঃ
তাহলে বেসরকারি চাকুরী কেন শুরু করলেন না?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, একটা কোম্পানিতে সেলসে এমটিও পদে চাকুরী শুরু করেছিলাম। ৫ মাস চাকুরী করেছি
(কোম্পানিটি কিন্তু অনেক বড় এবং চাকুরী সহজে যায়না)। কিন্তু কাজের অনেক চাপ তাই চাকুরি
ছেড়ে দিয়েছি। বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা।
(এরপর
চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আজ ২ বছরের বেশি বেকার হয়ে টিউশনি করে মাসে ১২ হাজার টাকা আয় করে।)
আমিঃ
আপনাকে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট হিসাবে ৪০০০০ টাকা দিবে আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবে না, সেটা
কেন ভাবলেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আসলে চাকুরিটা সহজে পেয়ে গিয়েছিলাম তাই গুরুত্ব দেয়নি, মনে করেছি আবার সাথে
সাথেই চাকুরী পেয়ে যাব।
আমিঃ
আপনি ৫ মাস কাজ করেই কেমন করে বুঝেছিলেন যে ক্যারিয়ার নাই ওখানে?
স্যারঃ
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়েরা বলেছিল।
আমিঃ
আপনি যে বললেন আপনার বড় ভাই বিসিএস এর জন্য ট্রাই করছে ৫ বছর ধরে। এখনও হয়নি। আপনি
সেটা থেকেও শিক্ষা নিয়ে কেন সিরিয়াস হলেন না?
ক্যান্ডিঃ
চুপ করে রয়েছে।
অথচ
তার বাবা কৃষিকাজ করে। তার ভিতর তেমন কোন আক্ষেপও নাই এ নিয়ে। আমি তার আগের কোম্পানির
কাজের যে এক্সপেরিয়েন্স তা থেকে ২-৩ টা খুব সহজ প্রশ্ন করলাম। সে কোন উত্তর দিতে পারল
না।
আমিঃ
আপনি তো আগের কাজের অভিজ্ঞতাও বলতে পারছেন না, তাহলে আপনাকে কি নিয়ে জিজ্ঞেস করব?
(আসলে আমি চাচ্ছিলাম কোনভাবে তার ভিতর থেকে পটেনশিয়ালিটি বের করে নিয়ে আসতে যেন তাকে
নিতে পারি)
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আমার তো বেশি কাজের এক্সপেরিয়েন্স নাই, তাই উত্তর দিতে পারছি না। আপনি একাডেমিক
প্রশ্ন করলে আমি পারব।
আমিঃ
আচ্ছা, আপনার অনার্সএ কয়টা মেজর কোর্স ছিল?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, মনে হয় ৪টা।
আমিঃ
মনে হয় কেন? আমি তো জানি ৮টা ছিল।
ক্যান্ডিঃ
জ্বি স্যার, ৮টা ছিল।
আমিঃ
কোর্সগুলার নাম বলতে পারবেন?
ক্যান্ডিঃ
২টা কোর্স এর নাম বলতে পারল খুব কষ্টে।
আমিঃ
আপনি তো আপনার একাডেমিক কোর্সে এর নামও তো জানেন না?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, অনেকদিন (২ বছর) হয়েছে তো, তাই ভুলে গেছি (হাসতে হাসতে বলল)।
আমিঃ
আচ্ছা, আপনি আজ ইন্টার্ভিউ দেবার জন্য কি কি প্রিপারেশন নিয়েছেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, সময় পায়নি তেমন। শুধু একটু ইন্টারনেটে আপনাদের কোম্পানি সম্পর্কে কিছি তথ্য
দেখে এসেছি।
আমিঃ
আচ্ছা, আপনি যে এখানে ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছেন, আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কি জানেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আপনাদের কোম্পানি জার্মান (!)। (অথচ কোম্পানির নাম ডেনমার্কের নামের সাথে মিল
করে রাখা)।
আমিঃ
আমাদের পণ্য কি বলেন তো?
ক্যান্ডিঃ
আপনারা কেক বিক্রি করেন।
আমিঃ
আমাদের পণ্যের কয়েকটা ব্র্যান্ডে এর নাম বলেন তো?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, অনেক আগে খেয়েছি তো তাই মনে আসছে না।
আমিঃ
তাহলে আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আমি মনে করেছিলাম যে আমার ইন্টার্ভিউ ভালই হবে।
আমিঃ
তো, এখন কি মনে হচ্ছে যে আপনার ইন্টার্ভিউ কেমন হয়েছে?
ক্যান্ডিঃ
চুপ করে রইল।
আমিঃ
আপনি যে ২ বছর ধরে বেকার এত ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা বিষয় থেকে পাশ করেও, তারপরও
আপনি ইন্টার্ভিউ এর জন্য সিরিয়াস না কেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, এরপর থেকে সিরিয়াস হব। আমাকে চাকুরিটা দেন।
আমিঃ
আচ্ছা, ঠিক আছে, আপনাকে না হয় সু্যোগ দিব। স্যাল্যারি নিয়ে কোন এক্সপেক্টেশন আছে কিনা।
ক্যান্ডিঃ
স্যার আমাকে ৪০০০০ হাজার টাকা দিলেই হবে শুরুতে। স্যার, আপনাদের টি/ডিএ কত?
আমিঃ
কেন ৪০০০০ টাকা, এর থেকে বেশি বা কম না কেন?
ক্যান্ডিঃ
স্যার, আগের কোম্পানিতে এটা পেতাম।
আমি
নির্বাক হয়ে বসে রইলাম সে যাওয়ার পর কিছুক্ষন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন