রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা

 

জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হবে। যেহেতু এ প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, ফলে তাদের কাজের প্রতি প্রত্যাশা ও কাজ করার ধরন ভিন্ন।

২৪-এর জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের কারণে করপোরেটের কাচঘর থেকে টং দোকানের টিনের তলায় সর্বত্র এখন আলোচনা ‘জেন-জি’ নিয়ে যাদের আমরা অস্থির, নিরাবেগী, গেজেট পাগলা, কমিটমেন্ট, বাস্তবিক জ্ঞানের অভাবী হিসেবে ভাবতাম কিছুদিন আগেও। বিবিসির গবেষণা অনুসারে জেনারেশন ‘জেড’ হলো ভুল বোঝাবুঝির শিকার একটি প্রজন্ম। এ প্রজন্মের বয়স ১৬-২৯ বছর। যারা নিজেদের খুবই কঠোর পরিশ্রমী, আত্মনির্ভরশীল ও সৃজনশীল বলে বিবেচনা করে থাকে। অথচ পুরনো প্রজন্মগুলো তাদের অলস ও স্বার্থপর মনে করে।

জেনারেশন জেড বা জেন-জিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এদের জুমারস, নেটজেন, টেকজেন বা নিও-ডিজিটাল নেটিভস, সাইড হ্যাসেল, ফিজিটাল জেনারেশন, ওপেন-টু-ওয়ার্ল্ড জেনারেশনও বলা হয়।

যারা ১৯৯৭-২০১২-এর মধ্যে জন্ম নিয়েছে। ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স ১২ বছর। ১৯৯৭ সালে উইন্ডজ-৯৭ কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আসে। একই সঙ্গে সিমেন্স ও নকিয়ার মতো মোবাইল ব্র্যান্ড বাজারে আসে। ১৯৯৭ সালে চালু হয় প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া সাইট সিক্স ডিগ্রি। যেখানে ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরিসহ ছবি আপলোড, শেয়ার ও বন্ধুত্ব করা যেত। এরই বর্তমান রূপ এখনকার এক্স (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) ও ইনস্টাগ্রাম। এ প্রজন্ম স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের যুগ থেকে ফেসবুক ও ইউটিউব যুগের রূপান্তরটা দেখেছে। এদের টেক বা নেট জেন বলার কারণ এরা জন্মের পর থেকেই টেকনোলজি, ইন্টারনেট, গ্যাজেট ইত্যাদি প্রযুক্তির ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছে। এরা কোনো কিছু জানতে মানুষকে প্রশ্ন করার চেয়ে কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে গুগল/সিরি/বিক্সবি/চ্যাটজিপিটি-কেই প্রশ্ন করতে বেশি পছন্দ করে।

এই জেনারেশনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ২৭ বছর। অর্থাৎ চাকরিতে এদের বয়স এক থেকে পাঁচ বছর। এরা গ্র্যাজুয়েশন করে ২৩-২৪ বছর বয়সে। ছাত্রাবস্থা থেকেই নিজেরা নিজের পকেট খরচ জোগাড়ের চেষ্টায় রত থাকে। ফলে অনেকের ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতার বয়স হয়ে গেছে সাত-নয় বছর। এরা ৩০ বছর বয়সে ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক পদে নিজেকে দেখতে চায়। ৪০ বছরে নিজেকে সিইও বা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিজেকে দেখতে চায়। এরা ফাস্ট ট্রাক ক্যারিয়ারে বিশ্বাসী। যতটুকু সময় পাবে যে প্রতিষ্ঠানে ততটুকু সময়েই নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা ফুটিয়ে তুলতে চায়। প্রতিষ্ঠানের জন্য অল্প সময়ে বেশি ইম্প্যাক্ট নিয়ে আসতে চায়।

এদের দিয়ে একই কাজ একইভাবে অনেকদিন ধরে করালে অর্থাৎ একই পদ, পদ্ধতি বা রোলে দীর্ঘদিন রাখলে এরা কাজে আনন্দ খুজে পায় না। তখন নতুন দায়িত্বে নতুন চাকরির খোঁজ করতে থাকে। এরা ফাস্ট লার্নার; দ্রুত যেকোনো কাজ শিখে নিতে পারার এক দারুণ দক্ষতা আছে এদের ভেতর। এরা দ্রুত কাজ শিখে দ্রুত ডেলিভারি দিতে চায়। এ শেখার ক্ষেত্রে এরা কম্পিউটার, ওয়েব, এআই, গুগল, উইকিপিডিয়া, ই-লার্নিং সিস্টেম, সার্চ ইঞ্জিন, ব্লগ, ভ্লগ, ইউটিউব, বিজনেস অটোমেশন, বট টেকনোলজি, ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রফেশনাল প্লাটফর্ম, অর্গানাইজেশনাল ডাটাবেজ, ডাটা আর্কাইভ, এক্সিকিউটিভ এডুকেশন, প্রফেশনাল ট্রেনিং, আপ-স্কিলিং, রি-স্কিলিংয়ের জন্য ডিজিটাল অ্যাপস ব্যবহার করে।

জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হবে। যেহেতু এ প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, ফলে তাদের কাজের প্রতি প্রত্যাশা ও কাজ করার ধরন ভিন্ন।

এরা কোনো বিষয় নিয়ে শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। জেন-জি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়ায় অভ্যস্ত। এরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে সৃজনশীলতা বা ক্রিয়েটিভিটি এবং উদ্ভাবনী কাজ বা ইনোভেশনের সুযোগ আছে সেখানে চাকরি করতে বেশি পছন্দ করে। এরা কাজের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক বা রক্ষণশীল স্টাইলের বদলে সরাসরি বা ডিরেক্ট কমিউনিকেশন পছন্দ করে—এটা সম্ভবত তার একটা কারণ। এরা যেকোনো কাজ একটা সিঙ্গেল ডাইমেনশনে করার থেকে বিভিন্ন ডাইমেনশনে কীভাবে দ্রুত ও ফলপ্রসূভাবে করা যায় সে চেষ্টা করে। এরা সিনিয়র বা জুনিয়র ভেদাভেদ কম করে কাজের ক্ষেত্রে। বসের কাছে নিজের মতামত মুখোমুখি ও সরাসরি দিতেই পছন্দ করে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা নিজেরাও বলে না, শুনতেও পছন্দ করে না।

এরা রেজাল্ট ড্রিভেন হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এদের ভেতর উদ্যোক্তা মানসিকতা থাকার কারণে যে কাজ বা চাকরিই করুক না কেন এরা দ্রুত ফলাফল প্রত্যাশী। এদের হাতে একটা লেটেস্ট ইন্টেল কোরের ল্যাপটপ তুলে দিয়ে ডাটা সম্পর্কিত কিছু কাজ ধরিয়ে দিন এরা আপনাকে সিম্পলি ম্যাজিক দেখিয়ে ছাড়বে।

তাদের একটা দুর্বল দিক হচ্ছে তারা একটু অস্থির প্রকৃতির। এটা আসলে এদের দোষ না। এদের জামানার দুনিয়াটাই অস্থির। তাই এদের অস্থিরতাকে নেতিবাচক চোখে না দেখে যদি একটু স্নেহ, পরামর্শ ও গাইড দিয়ে ওদের ভাষায় বুঝিয়ে দেয়া যায়, এরা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদে পরিণত হতে সময় নেবে না।

জেন-জিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে নিচের কৌশলগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে:

দ্রুত  স্পষ্ট যোগাযোগ: এ প্রজন্ম দ্রুত ও স্পষ্টভাবে যোগাযোগ পছন্দ করে। দীর্ঘ ই-মেইল বা মিটিংয়ের চেয়ে সরাসরি বার্তা, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগে তারা বেশি আগ্রহী। এরা অল্প কথায় কাজের পরিকল্পনা, অগ্রগতি, আপডেট জানতে ও জানাতে চায়।

প্রযুক্তির ব্যবহার: জেন-জি প্রযুক্তিতে দক্ষ, তাই তারা চায় দ্রুত ও কার্যকর সমাধান। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ডিজিটাল টুল যেমন বিজনেস অটোমেশন, ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম, ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ, বিভিন্ন অফিশিয়াল অ্যাপস যেমন মাইক্রোসফট ৩৬০, অ্যাডবি সিগনেচার ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য সুযোগ দিতে হবে এদের ধরে রেখে প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো ফলাফল আনার জন্য।

প্রতিক্রিয়া  স্বীকৃতি: এরা প্রায়ই কোনো কাজের বা কমিউনিকেশনের ইনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক চায় এবং কাজের ক্ষেত্রে তাদের অবদানের স্বীকৃতি আশা করে। তাই নিয়মিত ফিডব্যাক দেয়া এবং তাদের কাজকে রিকগনাইজ করার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা যায় এদের।

কাজের স্বাধীনতা  সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা: তারা নিজের কাজের মধ্যে স্বাধীনতা ও নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পছন্দ করে। এরা যেহেতু আত্মনির্ভরতাকে প্রাধান্য দেয় এবং আত্মসম্মানবোধ প্রবল, তাই তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ববোধ বাড়ানো যেতে পারে। শুধু মাঝে মাঝে কাজের ক্ষেত্রে একটু টিউন করে দিলেই ভালো করবে আশা করা যায়।

মানসিক স্বাস্থ্য  আবেগের সুরক্ষা: এরা যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমান গুরুত্ব দেয়। এরা চায় অফিসের সময় ও কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা ফ্লেক্সিবিলিটি। এরা চায় এদের ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং আবেগকে প্রতিষ্ঠান বা সহকর্মীরা গুরুত্ব দিক। এরা শরীরচর্চার জন্য জিমে যায়, মন ভালো করার জন্য মিউজিক শোনে, মুভি দেখে নেটফ্লিক্সে।

কর্মক্ষেত্রে বিনোদনমুখর পরিবেশ সৃষ্টি: এদের অনেকেরই ল্যাপটপে কাজের সময় খুবই লো ভলিউমে মিউজিক বাজে। কাজে যাতে বিরক্তি না আসে তাই এটির মাধ্যমে তারা নিজের মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করে। এরা কর্মক্ষেত্রে লাঞ্চের ফাঁকে বা কয়েক মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে কমনরুমে গিয়ে খেলা দেখতে বা খবর দেখতে পছন্দ করে। এরা কাজে ফাঁকি কম দেয়, যতটুকু কাজ করে সবটুকু উজাড় করেই করতে চায়। এরা আউটিং বা টিম বিল্ডিং খুবই পছন্দ করে। সহকর্মীদের সঙ্গে দলবেঁধে খেতে যাওয়া এদের দারুণ পছন্দ। এরা সহকর্মীদের সমস্যায় বা কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। শুধু এদের মন বা মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করলেই হয়।

মূল্যবোধ  সামাজিক দায়িত্ব: প্রতিষ্ঠানে এরা নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেয়। এরা প্রতিষ্ঠানে বৈচিত্র্য ও সাম্যের ব্যাপারে খুব সচেতন। তারা এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায় যেগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা বা করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি পালন করে এবং সাইটেইনেবল বা টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ নিয়ে কাজ করে।

শিক্ষা  দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দেয়া: এরা নতুন স্কিল বা দক্ষতা শিখতে খুবই আগ্রহী এবং নিজেদের ক্যারিয়ার উন্নতির পথ খুঁজে নিতে আগ্রহী। এরা এক্সিকিউটিভ লার্নিং বা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চায় চাকরিরত অবস্থায়। তাদের নিয়মিত স্কিল উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, কোর্স বা কর্মশালা প্রদান করে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ দিলে তারা প্রতিষ্ঠানকে আরো ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি কমিটমেন্টও বাড়বে।

কর্মক্ষেত্রভিত্তিক  অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাদান উদ্যোগ: বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কাজ শেখানোর সুযোগ দিলে তারা আরো দ্রুত শিখতে পারবে এবং উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। তাই কাজের মধ্যে বিভিন্ন প্রজেক্ট বা টাস্কের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা: এরা দলবদ্ধ কাজ করতে পছন্দ করে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমর্থনের পরিবেশ থাকলে কাজের মধ্যে ইতিবাচক ও উৎসাহজনক পরিবেশ তৈরি করলে তারা আরো ফলপ্রসূভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারবে।

আর্থিক নিরাপত্তা  স্থিতিশীলতা: আর্থিক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা এমন চাকরি খোঁজে যা শুধুই ভালো বেতন দেয় না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। যেমন ভবিষ্যৎ তহবিল, প্রফিট শেয়ার, উৎসব ভাতা, পারফরম্যান্স বোনাস, গ্র্যাচুইটি, বার্ষিক ভ্রমণ সুযোগ, ক্যারিয়ার গ্রোথ, বিভিন্ন টাইপের আইনানুগ ছুটি ইত্যাদি তাদেরকে প্রতিষ্ঠানে বেশি দিন থাকতে এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধ্যানুযায়ী কাজ করে ফলাফল নিয়ে আসতে উৎসাহিত করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কিছু সীমাবদ্ধতা সব জেনারেশনেই থাকে। যেহেতু জেন-জি নিয়ে আমাদের আগামীর পরিকল্পনা করতে হবে, তাই তাদের অসাধারণ প্রতিভাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য তাদের এসব চাহিদার দিকে নজর দিলে জেন-জি আরো বেশি উৎপাদনশীল বা প্রডাকটিভ ও সমৃদ্ধ কর্মী হয়ে উঠতে পারে এবং শুধু সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নয়, বরং একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোটা দেশকেই উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস।

শিবলী হুসাইন আহমদ

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ

ক্যারিয়ার পরামর্শক ও প্রশিক্ষক

বনিকবার্তা নিউজপেপার লিংকঃ

https://bonikbarta.com/editorial/RUiutqCot6Oekpk8/


জেন-জি বা জুমারসের বাস্তবতা ও সম্ভাবনা

 


শিবলী হুসাইন আহমদ

মানুষের জীবনের সবচেয়ে রহস্যময় বয়স বলা যায় কিশোর আর তরুণ বয়সকে। এ বয়সীদের নিজেদের মনের ভাব, চাওয়া, পাওয়া, মনের ভাষা, কর্মইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা অন্যকে বুঝিয়ে বলতে বেশ জটিলতায় পড়তে হয়। আবার অন্যরাও এ বয়সীদের মুখ ও মনের ভাষা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। সদ্য কিশোর বয়স পার করা তরুণরা জীবন সংগ্রামের এ অধ্যায়ে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন কী করবে, কী করবে এই ভেবে।
বর্তমান পৃথিবীতে এ বয়সী যারা আছেন তাদের বলা হচ্ছে ‘প্রজন্ম জেড বা জুমারস বা জেন-জি’। এদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। এর আগের প্রজন্মগুলো হলো ‘বুমার্স’; যাদের জন্ম ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪-এর মধ্যে। এরপর রয়েছে ‘জেনারেশন এক্স’; যারা ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালে জন্ম নিয়েছে এবং তাদের পরে ‘জেনারেশন ওয়াই’ বা ‘মিলেনিয়ালস’; যারা ১৯৮০-এর পর ১৯৯০-এর মধ্যভাগ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। আর সবার শেষ যে প্রজন্মটি পাইপ্লাইনে আছে তারা এখনও শিশু। তাদের বলা হচ্ছে ‘জেনারেশন আলফা’।

এ প্রজন্ম স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের যুগ থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবের যুগের রূপান্তরটা দেখেছে। ১৯৯৭ সালে চালু হয় প্রথম সোশ্যাল মিডিয়়া সাইট সিক্সটি ডিগ্রি যেটাই আজকের এক্স বা টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম। যেখানে সাইট সিক্সে ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরিসহ ছবি আপলোড, শেয়়ার এবং বন্ধুত্ব করা যেত। এরই ধারাবাহিকতায় এরা গ্রহণ করেছে কাগুজে পত্রিকার বদলে অনলাইন পত্রিকা বা পত্রিকার ইউটিউব ভার্সন, বাসায় বসে টিভি দেখার বদলে মোবাইলে ইউটিউবে টিভি চ্যানেল দেখা। ফেসবুক রিল, ইউটিউব শর্টস, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপ চ্যাট মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো চটকদার, আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কন্টেন্ট স্বাদ দিচ্ছে তাৎক্ষণিক ইচ্ছে পূরণের এবং সেটা অন্যকে জানানোর। এর ফলে তাদের মনোযোগের দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আজ এটা ভালো লাগছে তো কাল ওটা।

এতে করে দ্রুতগতির জীবনধারায় পাল্টে যাচ্ছে বিনোদন, সামাজিক সমীকরণ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম বা প্রথাগত ব্যবসা। বাজারে বা দোকানে যাওয়ার থেকে অনলাইন ই-কমার্সের মাধ্যমে পায়ের জুতা থেকে মাথার ফিতা, কাচা তরকারি থেকে রান্না করা খাবার সব কেনাকাটাই সারতে চায় পছন্দ অনুযায়ী। নেটফ্লিক্স থেকে প্রাইমভিডিও, এমাজান থেকে আলিবাবা সবত্রই খুঁজে ফেরে বিনোদিত হওয়ার মতো কিছু। টেক্সট চ্যাটের বদলে ভয়েজ চ্যাট পছন্দ করে সময় ও শ্রম বাঁচানোর জন্য, সঙ্গে বেটার ও রিয়েলিস্টিক ফিল পাওয়ার জন্য।

জেন-জি সামাজিক মাধ্যমগুলোয় তাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল সবাই দেখাতে পছন্দ করে। প্রত্যেকে নিজের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভার্চুয়াল জগতে তাদের জীবনধারাকে শেয়ার করে। অথচ আগের প্রজন্মের কিশোর-তরুণরা ব্যক্তিগত ডায়েরি ব্যবহার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ এবং গোপনীয়তার জন্য। সেই ডায়েরি পড়ার কারও অধিকার ছিল না। সেটা ছিল একান্তই তার নিজের জগৎ, যেখানে কারও প্রবেশ অধিকার ছিল না। জেন-জিরা ঠিক উলটো এ ক্ষেত্রে।
সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ সারা বিশ্বব্যাপী একটা সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায়, জুমারসদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ইউটিউব, ৭২ শতাংশ টিকটক, ৬৯ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম, ৫৬ শতাংশ স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে, ৪৪ শতাংশ ফেসবুক, টুইটার ৪৫ শতাংশ, পিন্টারেস্ট ৩৫ শতাংশ ও লিংকডিন ২১ শতাংশ ব্যবহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখা যায়, জুমারসদের ৯৮% সোশ্যাল মিডিয়়া ব্যবহার করে, ৮১ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়়ার মাধ্যমে নতুন পণ্য এবং সার্ভিস আবিষ্কার করে, ৪০ শতাংশ সময় ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে ব্যয় করে, ৪৫ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়়ায় নিজেকে নিখুঁত প্রমাণের চেষ্টা করে।

এরা কোনো বিষয় নিয়ে শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। জেন-জি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়ায় অভ্যস্ত। এর ধারাবাহিকতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেন্দ্র, পারসোনাল কাউন্সেলিং কেন্দ্র, অভিজ্ঞ পরামর্শকেন্দ্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন দিবস উদযাপন তারই দৃষ্টান্ত।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিংয়ের উত্থানটা হয়েছে মূলত এদের সময়টাতে। এদের সাইড হাসেল জেনারেশনও বলা হয়ে থাকে উদ্যোক্তা মনোভাব এবং আয়ের ছোট ছোট মাধ্যমের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কারণে। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে আপওয়ার্ক, ফিভার, ইটসি, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে আয়ের প্রতি এদের আগ্রহ স্কুলজীবন থেকেই। অনেক তরুণ শুধু অতিরিক্ত আয়ে়র জন্য নয়় বরং ফুল-টাইম চাকরি হিসেবে এ কাজগুলোয় নিয়োজিত থাকে। এসব প্রোজেক্টভিত্তিক কাজের সময়সীমাতে স্বাধীনতা থাকায় পড়়াশোনার পাশাপাশি এ ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তাদের দারুণ আগ্রহ কাজ করে। এসব প্রোজেক্টগুলোয় থাকে যথেষ্ট বৈচিত্র্য। পাশাপাশি সুযোগ থাকে নিজের পারদর্শিতাকে নিলামে তোলার মাধ্যমে নিজের কাজের মূল্য বৃদ্ধির। যেমন ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, রিসার্চ পেপার ডেভেলপমেন্ট, ব্যাকঅফিস সাপোর্টের মতো কাজগুলো ঘরে বসেই দেশ-বিদেশের নানা ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ নেয়া এবং করে দেয়া বা জমা দেয়া যায়। আবার এর বিনিময়ে প্রাপ্ত মজুরিও ঘরে বসেই পাওয়া যায়।

‘বুমার্স’ জেনারেশন বেড়ে উঠেছিল টেলিভিশনের সঙ্গে, আরও ছিল রেডিও এবং প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম। এরপর জেনারেশন এক্স বড় হয় কম্পিউটার বিপ্লবের হাত ধরে। আর ‘জুমারস’ জেনারেশনের আমলে হয় ইন্টারনেট বিস্ফোরণ। এরা বেড়ে উঠেছে মাল্টিডাইমেশনাল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে, যেটাকে ফিজিটাল পৃথিবীও বলা যেতে পারে। এরা সুপারফাস্ট টাইমলাইনের সুইপারফাস্ট জেনারেশন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। এরা রীতিমতো মোবাইল বা ল্যাপটপের ওপর চড়ে বসে থাকে প্লেনে চড়ার মতো করে। এরা কথা বলাতেও ভাষার সংক্ষিপ্ত ফর্ম ব্যবহার করে।
এ প্রজন্ম সাধারণত ফার্স্টফুড, কন্টিনেন্টাল ফুড, স্ট্রিটফুড এবং রেস্টুরেন্টে খেতে বা বাইরের খাবার পছন্দ করে। নতুন খাবারের স্বাদ গ্রহণ বা সময় কাটাতে রেস্টুরেন্ট তাদের একটা প্রিয় স্থান।

জেন-জির এই নতুন তরুণ প্রজন্মকে অগ্রগতিশীল, চিন্তাশীল, সহানুভূতিশীল ও পরিশ্রমী বলে আখ্যায়িত করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নতুন করে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। নতুন সূচনা হচ্ছে একের পর এক, সাজানো হচ্ছে এই দেশ। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ সমাজ তথা জেন-জি। জেনারেশন মিলেনিয়াম এর প্রযুক্তির প্রারম্ভিক পথের রেশ ধরে এরা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে নতুন এক বাস্তবতায়। এই জেনারেশনের চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি কাজের আগের জেনারেশন থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ তারা ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট হাত ধরে বড় হয়েছে, হাতের ওপরে গোটা বিশ্বকে দেখে বড় হয়েছে। যাদের মনজগৎ জুড়ে রয়েছে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। এরা গ্লোবাল নাগরিক হতে চায়। নিজেদের সীমানা নির্ধারণ করাতে এদের যথেষ্ট অনিহা। এরা নিজেদের অসীম সীমানা ও সম্ভাবনা দেখতেই বরং বেশি ভালোবাসে।

তবে জেন-জেড প্রজন্ম খুব আত্মবিশ্বাসী। এই প্রজন্ম মনে করে, তারা যা করে সেটাই সঠিক। তাই অন্যদের পরামর্শকে খুব কম পাত্তা দেয়। এরা কখনও ইন্টারনেট ছাড়া একটি বিশ্ব কল্পনা করতে পারে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তা থাকলেও এ প্রজন্ম এআই নিয়ে আশাবাদী। তাদের ধারণা, এআই ও ইন্টারনেট দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেয়া সম্ভব। এ প্রজন্মের ৫৯ শতাংশ এআই দিয়ে বানানো তথ্যকে অনেক বা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করে। জেন-জেডরা অর্থ সাশ্রয়কে করতে, ভ্রমণ করতে ভালোবাসে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে আগ্রহী, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পছন্দ করে। তাদের হাতে বেশ টাকাও আছে। তাদের আয়ের বড় উৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েশন। এরা ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছে, ইনফ্লুয়েন্সার হচ্ছে, ভিডিও কনটেন্ট বানিয়ে রোজগার করছে।
চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে এরা সিনিয়র বা জুনিয়র ভেদাভেদ কম করে কাজের ক্ষেত্রে। বসের বা অভিভাবকের কাছে নিজের মতামত মুখোমুখি ও সরাসরি দিতেই পছন্দ করে। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা নিজেরাও বলে না, শুনতেও পছন্দ করে না। এরা ফলফলকেন্দ্রিক হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এদের হাতে একটা লেটেস্ট ইনটেল কোরের ল্যাপটপ তুলে দিয়ে ডেটা সম্পর্কিত কিছু কাজ ধরিয়ে দিন এরা আপনাকে সিম্পলি কাজে জাদু দেখিয়ে ছাড়বে।

এদের একটা দুর্বল দিক হচ্ছে এরা একটু অস্থির প্রকৃতির। এটা আসলে এদের দোষ না। এদের জামানার দুনিয়াটাই অস্থির। তাই এদের অস্থিরতাকে নেতিবাচক চোখে না দেখে যদি একটু স্নেহ, পরামর্শ ও গাইড দিয়ে ওদের ভাষায় বুঝিয়ে দেয়া যায়, এরা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদে পরিণত হতে সময় নেবে না। প্রতিষ্ঠানে এদের দিয়ে একই কাজ একইভাবে অনেকদিন ধরে করালে অর্থাৎ একই পদ, পদ্ধতি বা রোলে দীর্ঘদিন রাখলে এরা কাজে আনন্দ খুঁজে পাই না। তখন নতুন রোলে নতুন চাকরির খোঁজ করতে থাকে। এরা ফাস্ট লার্নার। দ্রুত যে কোনো কাজ শিখে নিতে পাওয়ার এক দারুণ দক্ষতা আছে এদের ভেতর। এরা কাজ শিখে দ্রুত ডেলিভারি দিতে চাই।

এরা চাই কোনো কাজে দ্রুত ও স্পষ্ট যোগাযোগ করতে। জেন-জি চাই তাদের কাজকে অন্যরা স্বীকৃতি দিক এবং তা কাজ সম্পাদনের পরেই চাই। এরা নিজের করা কাজের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা চাই। এরা চাই তাদের আবেগকে প্রতিষ্ঠানে বা সমাজে মূল্যায়ন করা হোক যথাযথভাবে। এরা কর্মক্ষেত্রে বিনোদনমুখর পরিবেশ চাই। এরা চাই বিদ্যালয়, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র সর্বত্রই যেন এরা অবদান রাখতে পারে। তাই আমাদের উচিত এর প্রজন্মের তরুণদের স্নেহশীলতা দিয়ে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের মিশেলে সবুজ বৈষম্যহীন পৃথিবী বিনির্মাণে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বেড়ে উঠতে এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করা।

শেয়ারবিজ নিউজপেপার লিংকঃ

https://sharebiz.net/%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%9c%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ac/


বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২

ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব। কিন্তু ভয় পাচ্ছি!

ভাবতেছি জবটা চেঞ্জ করব।
কিন্তু ভয় পাচ্ছি!

যারা এমন চিন্তায় আছেন তারা ঠিক লাইনেই আছেন। কারন আপনি কেন জব চেঞ্জ করতে চান তা আপনার থেকে ভাল কেউ বুঝবে না। আবার আপনি যে ভয় পাচ্ছেন সেটাও ঠিক আছে, কারন বিশ্ববাজার ইদানিং অতিরিক্ত অস্থির।

তবে, জব চেঞ্জ করেন আর নাই করেন, ইন্টার্ভিউ এর কল পেলে এটেন্ড করতে পারেন। এতে মার্কেটে আপনার চাহিদা, যোগ্যতা ও দুর্বলতার একটা পরিক্ষা হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি এখনও দারুনভাবে মার্কেটেবল আছেন কিনা।

তবে জব চেঞ্জ করার ব্যাপারে যেন শুধুই পদবি, অর্থলোভ বা অর্থলাভ চিন্তা করবেন না। যেখানে আপনার মতামত, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে সম্মান করা হবে এবং আপনাকে কাজের প্রয়োজনে যেটুকু অথোরিটি দরকার সেটা দেওয়া হবে সেখানেই যাবেন। আর যতদিন পর্যন্ত নতুন কোন জবে না ঢুকছেন, তার আগের দিন পর্যন্ত যে প্রতিষ্ঠানে যে দায়িত্বে আছেন তার সবটুকু নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে ভালবেসে কাজ করে যাবেন।

তবে জব ফাইনালি চেঞ্জ করার পূর্বে যে কোম্পানি থেকে অফার এসেছে তার সম্পর্কে আপনার সাধ্যমত খোজ বা পরামর্শ নিবেন এক বা একাধিক উৎস থেকে, কিন্তু সিধান্ত নিবেন নিজের মন থেকে।

উপরোক্ত অভিমত আমার একান্ত ব্যাক্তিগত, কারও অমত থাকতেও পারে।

"সাবধান! এই লেখাটা পুরো পড়লে আপনি এভাটার থেকে মানুষ হয়ে যেতে পারেন"

 "সাবধান! এই লেখাটা পুরো পড়লে আপনি এভাটার থেকে মানুষ হয়ে যেতে পারেন"


আমরা মেটাভার্সের (ফেসবুক) অবাস্তব এক রঙচঙে দুনিয়ার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। যেখানে বাস্তবতা আড়াল করে সবাই নিজের এবং অন্যের সুখি, সমৃদ্ধ ও চকচকে সুন্দর এভাটার দেখাতে ও দেখতেই ব্যাস্ত! 💪

এখানে সবাই নিজেকে হয় শক্তিশালী ও প্রভাবশালী প্রমান করতে ব্যাস্ত, নাহয় শক্তিশালি ও প্রভাবশালি লোকদের তোষামোদে ব্যাস্ত। খোজ রাখি না দূর্বল, পিছিয়ে পড়া বা কমজোর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, খুব কাছের পরিচিত মানুষদের যারা ছোট কাল থেকে আজ পর্যন্ত জীবন চলার পথে আমাদের সঙ্গ দিয়েছে। অত সময় কোথায় আমাদের! 👉

এই মেটাভার্সের রঙিন জগতে বাস্তবে কে কেমন আছে বোঝার চেস্টাও করিনা, বোঝার উপায়ও নাই। শুধুই ভাল থাকা ও ভাল রাখার অভিনয় করে চলা এক একজন ভার্চুয়াল দুনিয়ার এভাটার আমরা! 🤴

কতই না ভাল ভাল! হত যদি আমরা আবার মেটাভার্সের ভার্চুয়াল এভাটার থেকে পুরোপুরি ইউনিভার্সের মানুষ হতে পারতাম!! 🫂

করপোরেট দুনিয়ায় ‘জেন-জি’ কর্মী ব্যবস্থাপনা

  জেন-জিদের কর্মস্থলে কার্যকরভাবে হ্যান্ডলিং করা বা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং মানসিকতার দিকে নজর দিতে হব...